প্রেমের বিষয় পরিবারে জানিয়ে দেওয়ায় দশ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে ‘বন্ধুকে’ ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন দুই বন্ধু। পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ে মোটরসাইকেলের সিটের নিচে ইয়াবা রেখে ফাঁসানোর গল্প। শেষে পরিকল্পনাকারী দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায়। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
গ্রেফতার দুই বন্ধু হলেন- ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অনন্তপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে জুয়েল হক (২৮) ও নাগেশ্বরী উপজেলার এগারো মাথা সাতকুড়ারপাড় এলাকার আছকের আলীর ছেলে মনির হোসেন। এদের মধ্যে জুয়েল হক মূল পরিকল্পনাকারী। মনির তার বন্ধু ও সহযোগী। আর মোটরসাইকেল মালিকের নাম মিলন মিয়া (২৫)। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে জুয়েল তার বন্ধু মিলন মিয়াকে ফাঁসাতে ইয়াবা নাটক সাজায় বলে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে জানিয়েছে পুলিশ।
নাগেশ্বরী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অপূর্ব কুমার জানান, শনিবার (১৪ জুন) রাতে মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে জানান, নেওয়াশী ইউনিয়নের এগারো মাথা বাজারে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলের সিটের নিচে ইয়াবা রয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে বাজার থেকে মোটরসাইকেলটি আটক করে সিট ও যন্ত্রাংশ খুলে ৬৭টি ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। মোটরসাইকেলের মালিক মিলন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিলন ফুলবাড়ী উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের আজোয়াটারি গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেনের ছেলে।
ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ির মালিক মিলন ইয়াবার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলেও জানান। ধারণা করা হয়, ওই ব্যক্তিকে ফাঁসাতে সিটের নিচে ইয়াবা রাখা হয়ে থাকতে পারে। পরে বাজার থেকে সোর্স মনিরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মনির জানায়, এ ঘটনায় জুয়েল জড়িত। জুয়েলের কথায় তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। পরে রবিবার ভোরে বাড়ি থেকে জুয়েলকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ফাঁসানোর পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে জুয়েল।
জুয়েলের স্বীকারোক্তির বরাতে পুলিশ জানায়, প্রেমসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত কিছু বিষয় জুয়েলের পরিবারকে জানায় তার বন্ধু মিলন। এ নিয়ে কয়েক মাস আগে তাদের মনোমালিন্য হয়। এর প্রতিশোধ নিতে তার আরেক বন্ধু মনিরসহ মিলনকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে জুয়েল। মাদক দিয়ে ফাঁসাতে দশ হাজার টাকায় ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয় করে। ঘটনার দুদিন আগে কিছু বুঝতে না দিয়ে কৌশলে মিলনের মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়িতে যায় জুয়েল। সিটের নিচে ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে গাড়ি ফেরত দেয়। পরে জুয়েলের পরামর্শে পুলিশকে ফোন দিয়ে মোটরসাইকেলে ইয়াবা থাকার কথা জানায় মনির। কিন্তু পুলিশের নিবিড় তদন্তে তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
বন্ধুর পাতানো ফাঁদ থেকে বেঁচে যাওয়া মিলন মিয়া বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি। ঈদে বাড়িতে এসেছি। গত শুক্রবার জুয়েলের খালাতো ভাই তার বাবাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আমার মোটরসাইকেল নেয়। পরে জুয়েল মোটরসাইকেল নিয়ে ইয়াবা রেখে আমাকে ফাঁসানোর ছক আঁকে। কিন্তু পুলিশের নিরপেক্ষ ও নিবিড় তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।’
‘তার (জুয়েলের) পরিবারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। আমরা একসময় বন্ধুর মতো মেলামেশা করেছি। তার ও তার পরিবারের ভালোর কথা চিন্তা করে কিছু বিষয়ে তার পরিবারকে জানালে তখন থেকে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তখন থেকে আমাদের তেমন মেলামেশাও নেই। কিন্তু প্রতিশোধ নেশা থেকে সে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে’—যোগ করেন মিলন।
এদিকে এ ঘটনায় নাগেশ্বরী থানার এসআই অলকান্ত রায় বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জুয়েল ও মনিরকে আসামি করে মামলা করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রভাত চন্দ্র রায় বলেন, ‘আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে রবিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’
নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ‘সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে মোটরসাইকেলসহ ইয়াবা উদ্ধারের পর ঘটনাটি নিয়ে আমাদের সন্দেহ জাগে। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে তদন্ত করি। সোর্স হিসেবে পুলিশকে ফোন দেওয়া মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসে। মূলত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে “বন্ধুকে” ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেলে ইয়াবা রাখা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’