‘প্রেমের ‌অপরাধে’ কিশোরকে নির্যাতন প্রেমিকার পরিবারের, মামলা নেয়নি পুলিশ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রেম করার অপরাধে এক কিশোরকে ঘরে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কিশোরী ‘প্রেমিকার’ পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী কিশোরকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে নির্যাতনের শিকার কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দিলেও গত তিন দিনেও মামলা নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার কিশোর (১৭) উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা। একই ইউনিয়নের এক কিশোরীর (১৪) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর অপরাধে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, কিশোরীর পরিবারের ১২-১৩ জন সদস্য কিশোরকে আটকে রেখে নির্যাতন করেন। এ নিয়ে ১৫ জুন কিশোরের বাবা বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয় জনকে আসামি করে চিলমারী মডেল থানায় এজাহার দেন। তবে নানা অজুহাতে মামলা নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ জুন সন্ধ্যায় কিশোরী মোবাইল থেকে মেসেজ দিয়ে কিশোরকে তার বাড়ির সামনে ডেকে নেয়। এরপর দুজনে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যায়। কিশোরীর পরিবারের লোকজন বিষয়টি জেনে পরদিন তাদের খুঁজে বের করেন। এরপর কিশোরকে স্থানীয় একটি বাড়ির ঘরে আটকে নির্যাতন করেন।

কিশোরের বাবা জানান, কিশোরীর চাচা রফিকুলের নেতৃত্বে তার ছেলের হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে দিয়ে ঘরের ভেতর খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। তার শরীরে চেতনানাশক ইনজেকশন দেওয়া হয়। অভিযুক্তরা তার পিঠে, বুকে, হাতে ও পায়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এমনকি তার পুরুষাঙ্গে ও হাত-পায়ের নখে সুই ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়।

কিশোরের বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিশোরীর চাচা রফিকুল সাবেক সেনাসদস্য। এজন্য তিনি জানেন কীভাবে নির্যাতন করতে হয়। আমার ছেলের অবস্থা খুবই খারাপ। ছেলের পুরুষাঙ্গে সুই ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাকে আলাদা নল লাগিয়ে প্রস্রাব করানো হচ্ছে। এলাকাবাসীর কাছে চাঁদা তুলে চিকিৎসা করাচ্ছি ছেলের।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ জুন থানায় লিখিত অভিযোগ দিই। ওসি বলছেন, রংপুর মেডিক্যালে ভর্তির সার্টিফিকেট এবং ছেলের ভিডিও দিতে হবে। অভিযোগ প্রিন্ট করে জমা দিতে হবে। এভাবে কাগজ দেওয়ার পর আমার স্বাক্ষর নিয়েছে। এখন পুলিশ বলতেছে, থানায় না দিয়ে আদালতে মামলা দেন। এজন্য এখনও মামলা রেকর্ড করেনি পুলিশ।’

অভিযাগের বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরীর চাচা রফিকুল বলেন, ‘ওই দিন স্থানীয়রা আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। ওই কিশোর একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ধরে এনেছিল স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় লোকজন বৈঠক করে কিশোরকে মারধর ও শাসন করে পাঠিয়ে দিয়েছিল।’

কারা মারধর করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল বলেন, ‘ছেলের অভিভাবকরাই মারধর করেছিলেন। মারধরের ঘটনায় যদি মেডিক্যাল টেস্টে প্রমাণিত হয়, আর এটার যদি সঠিক অভিযুক্ত আমি হই; তার জন্য আইনগতভাবে যেটা হবে সেটা মানতে আমি রাজি আছি।’

চিলমারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘তিন দিন আগে অভিযোগ দিয়েছিল। পরে আসামিদের নাম সংশোধনের জন্য বাদী এজাহার ধরে রাখেন। সংশোধন করে বুধবার জমা দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা এসপি স্যারের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় আছি। স্যার অনুমোদন দিলে মামলা নথিভুক্ত করা হবে। কারণ এসপির অনুমোদন ছাড়া মামলা নথিভুক্ত করা সম্ভব নয়।’