দিরাইয়ে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

অভিযোগকারীরা

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেওয়া ভিজিএফ কার্ড বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লিখিত অভিযোগ জাম পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ত্রাণ বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনএ) কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসছে হাওরপাড়ের লোকজন।

দিরাই উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও-এর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণে অর্ধশতাধিক লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে ভিজিএফ কার্ডের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার উপজেলার রাজানগর ইউপির ২নং ওয়ার্ডের সদস্য অভিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ করেন ওয়ার্ডের শতাধিক বাসিন্দা। দিরাই ইউএনও অফিস থেকে ৩ দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও তদন্ত শুরু হয়নি। ফলে এলাকাবাসীর মাঝে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে। কোনও কোনও এলাকায় এ নিয়ে মারামারি ও মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

৪ মে থেকে দিরাই পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড চণ্ডিপুর থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন বিকালেই ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেন অর্ধশতাধিক কৃষক। অভিযোগ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পৌর মেয়রের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ফয়েজ উদ্দিন নামে এক কৃষক আহত হন। হামলার ঘটনায় মেয়রের দুই ছেলেসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্যে কমিটি হয়। তিন কর্ম দিবসের মাঝে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ ছিল।

১০ মে ত্রাণ বিতরণের সময় অনিয়মের অভিযোগে জনপ্রতিনিধিদের ওপর হামলা করে ২ নং ভাটিপাড়া ইউপির দলকুতুব গ্রামের লোকজন।

অনিয়মের বিরুদ্ধে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্র

এছাড়া তালিকায় নাম দেওয়ার কথা বলে নগদ টাকা নিয়েও নাম না দেওয়ায় রাজানগর ইউপির মহিলা সদস্য সবিতা রানী তালুকদারের ওপর হামলা হয়েছে।

৯ নং কুলঞ্জ ইউপির রাড়ইল গ্রামের সাবেক মেম্বার জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘তালিকা তৈরিতে অনিয়ম নিয়ে দিরাইয়ের ইউএনও-এর কাছে ২৬ মে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু পরের দিনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে ত্রাণ বিতরণ করেন। শুনেছি ইউআরসি অফিসারকে অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ছুটিতে থাকায় তদন্ত শুরু করেননি।’

এ ব্যাপারে  ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর আবু ইউসুফ সারোয়ার বলেন, ‘আমি ছুটিতে বরিশালে আছি। দুটি অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। এখনও শুরু করিনি।’

একইভাবে রফিনগর ইউনিয়নে কয়েকটি অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানকে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ৩/৪ দিন আগে দুটি অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার নোটিশ পেয়েছি।

দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘সব অভিযোগ ইউএনও-এর কাছে দেওয়া হয়েছে। তদন্তের জন্য কমিটি হয়েছে। তবে কোনও অভিযোগ এখন পর্যন্ত তদন্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

দিরাইয়ের ইউএনও তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, 'অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই উপজেলা মানবিক সহায়তা বাস্তবায়ন কমিটির মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, ‘সরকারি ত্রাণ নিয়ে কোনও অনিয়ম প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হবে।’  

/এসটি/