যদিও সিলেটে নাগরি লিপি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনও গবেষণা হয়নি। তবে এ লিপি নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গবেষণা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। ভাষা বিজ্ঞানিরা বিভিন্ন পর্যায়ে এ ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন। তবে এখন আর আগের মতো ব্যক্তিগত পর্যায়েও তেমন গবেষণা হয় না বলে নাগরি লিপির গবেষকরা জানান।
এভাবে ভাষাটির চর্চায় ভাটা পড়লেও গবেষণা চলেছে অনেক। নাগরি লিপি নিয়ে গবেষণা করে এ পর্যন্ত তিনটি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জিত হয়েছে। এরমধ্যে এস এম গোলাম কাদির ‘সিলটী নাগরি লিপি ভাষা ও সাহিত্য’ শিরনামে গবেষণা করে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ভারতের আব্দুল মুছাব্বির ভূইয়া আসাম রাজ্যের গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সিলটী নাগরি লিপি’র ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। তার ‘জালাবাদি নাগরি, এ ইউনিট স্ক্রিপ্ট’ শীর্ষক থিসিস ইংরেজি ভাষায় মুদ্রিত হয়ে ২০০১ সালে বই আকারে বেরিয়েছে। ‘সিলেটি নাগরি: ফকিরি ধারার ফসল’ শীর্ষক থিসিসের জন্য ড. মোহম্মদ সাদিক ২০০৫ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
নাগরি লিপির গবেষক, পুঁথি সংগ্রহক ও প্রকাশক মোস্তফা সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নাগরি লিপি পুনরুদ্ধার ও পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উৎস প্রকাশনী। লিপিটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমরা ২৫টি নাগরি লিপির বই প্রকাশ করেছি, যা সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে। পঞ্চাশ থেকে সত্তর বছর আগে নাগরি লিপি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। সময়ের ব্যবধানে এ লিপির মূদ্রণ, চর্চা আর পাঠকও কমে যায়। নাগরি লিপির মূদ্রণ, চর্চা আর পাঠক ধরে রাখতে উৎস প্রকাশনীর পক্ষ থেকে সিলেটসহ দেশের অন্যান্য স্থানে আলোচনা-সভা ও সেমিনার করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাগরি লিপি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ভাষা। এটাকে ধরে রাখতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
সাহিত্য গবেষক ও লেখক সুমন কুমার দাস বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, ‘নাগরি লিপি সিলেটে একটি ঐতিহ্য। এই লিপি বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায়। বাংলা ভাষা যে বৈচিত্র্য রয়েছে, তার মূলে রয়েছে নাগরি লিপি। সিলেটের মরমী সাধক সৈয়দ শাহনূর, দিন ভবানন্দ’র নাগরি লিপি দিয়ে লেখা গানগুলো বাংলা ভাষায় সম্পাদন করার কাজ করে যাচ্ছেন প্রায় চার বছর থেকে। ইতোমধ্যে কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই উৎস প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হবে।’
সুমন কুমার দাস জানান, নাগরি লিপি সংরক্ষণসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন নাগরি লিপির গবেষক, পুঁথি সংগ্রহক মোস্তফা সেলিম। মূলত তার কারণেই নাগরি লিপিটি এখন টিকে আছে।
জানা গেছে, নাগরি চর্চায় ভাটা পড়লেও আশার আলো ফুটে উঠেছে। নাগরি ফন্ট এখন কম্পিউটারে উদ্ভাবিত হয়েছে। সিলেট নগরীতে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কম্পিউটার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার নামের কম্পিউটার বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা খায়রুল আক্তার চৌধুরী ও ফয়জুল আক্তার চৌধুরী— এ দুই ভাই তাদের যুক্তরাজ্য প্রবাসী চাচা বিশিষ্ট নাগরি গবেষক রসায়নবিদ আবদুল জলিল চৌধুরীর নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে ১৯৯৪ সালে সিলেটে নাগরি ফন্ট উদ্ভাবন করেন।
/এমএ/এসএমএ/