হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরের বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি


pic-mbমৌলভীবাজারের ৫টি উপজেলার জেলাসদর ও রাজনগর,কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় হাকালুকি ও কাউয়াদিঘী হাওরের বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হয়েছে। গত কয়েক দিনে ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি ফের অবনতি হয়েছে। ফলে ফের বাড়িঘর রাস্তাঘাট ডুবতে শুরু করেছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় ৩ থেকে ৪ লাখ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।


জানা গেছে, ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, উপসনালয় এখনও পানির নিচে। সব মিলিয়ে জেলা সদরসহ রাজনগর কুলাউড়া, জুড়ীর ও বড়লেখা উপজেলার ৩ লাখ ১০ হাজার ৮০ জন মানুষ চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছেন। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুর্গত এলাকার অনেকেই গিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্র বা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। হাওর এলাকার কৃষি ও মৎস্যজীবী মানুষগুলো কর্মহীন থাকায় নেই আয় রোজগারও। যারা নিজ বাড়িতে রয়েছেন, পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের এখন অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
এছাড়া গো-খাদ্যের পাশাপাশি গবাদি পশু রাখার জায়গা নিয়েও তারা পড়েছেন সংকটে। খাদ্যহীন গৃহহীন মানুষগুলো রাত পোহালেই ত্রাণের আশায় পথ চেয়ে থাকেন।

বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস ও কুলাউড়ার ভুকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে হাওরের প্রায় ৬-৭ ইঞ্চি পানি বেড়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ফের ভারি বৃষ্টিতে আবার পানি বাড়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের বাড়ি ফেরা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে জনদুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভার ৩৫০টি গ্রামে তিন লাখ ১০ হাজার ৮০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। তবে এখনও ৩ লাখ ১০ হাজার ৮০ জন মানুষ পানিবন্দি আছেন। ৩৫টি ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৫৫ হাজার২৬৭টি, ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৬৪৩ হেক্টর, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ৫২৫টি,আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার ১০৮টি, ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ৫৫০টি পরিবার ও ২৫০টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।hakaluki-pic-16-moulvibazar-flood
জেলা প্রশাসন আরও জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জেলায় ৯২৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল আলীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি থাকায় স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে।’
মৌলভীবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ মোট ২৭টি প্রতিষ্ঠানে আপাতত পাঠদান বন্ধ রয়েছে।’
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, `রবিবার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ও সিলেটের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার এবং সিলেটের শেওলা পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।’
এদিকে দুর্গত এসব অসহায় মানুষের জন্য সরকারের পাশপাশি বেসরকারি উদ্যোগে যে যার অবস্থান থেকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘নগদ টাকা ছাড়াও চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, চিড়া, বিস্কিট যে যা পারেন, অল্প হলেও এগিয়ে আসুন। আপনি নিজেও পৌঁছে দিতে পারেন অথবা আমাদের কাছে দিলে আমরা পৌঁছে দেবো।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম রবিবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারতে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলার হাকালুকি ও কাউয়াদিঘী হাওরের বন্যা পরিস্থিতি আবার অবনতি হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝেও ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।’
/এআর/