ইমাম পরিবর্তন নয়, চেয়ারম্যান-মেম্বারের দ্বন্দ্বেই ডাবল মার্ডার

এই মসজিদের কমিটি গঠন নিয়েই শনিবার সংঘর্ষ হয় মসজিদের ইমাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে নয়, হবিগঞ্জের বাহুবলের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বের কারণে শনিবারের (১২ আগস্ট) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।  দীর্ঘদিনের সেই দ্বন্দ্বের বহির্প্রকাশ ঘটে শনিবার সকালে। যার ফলে প্রাণ হারায় দুজন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে বাহুবলের সাতকাপন ইউনিয়নের মুগকান্দি গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আব্দাল আখঞ্জি ও  মেম্বার মোশাহি মিয়ার মধ্যে এলাকার আধিপত্য বিস্তার,সিলিকা (সাদা) মাটির সিন্ডিকেটসহ নানা বিষয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাদের কারণে গ্রামবাসী দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত কবির আখঞ্জি ও মতিন মিয়া একই গ্রুপে ছিলেন। গত বছর একটি সংঘর্ষে কবির মিয়া বড় ভাই কিছুদিন জেল হাজতে থাকেন। এ কারণে তিনি মেম্বারের গ্রুপ ছেড়ে চেয়ারম্যানের গ্রুপে চলে আসেন। এতে আখঞ্জি গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এতে মেম্বারের গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে কবির আখঞ্জির ওপর। এ নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থলে পুলিশ

এনাম মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান,এক বছর ধরে মধুপুর পাহাড় থেকে মেম্বারের লোকজন সাদা মাটি কেটে সিরামিক্স কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে। তাদের দেখাদেখি চেয়ারম্যানের গ্রুপের লোকজনও অবৈধভাবে সাদা মাটি কেটে বিক্রি করতে শুরু করে। এ নিয়েও দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ বাধে। পরে দু’পক্ষই সাদা মাটির কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। এরপরও আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো।

একই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সম্প্রতি মসজিদ কমিটি গঠন নিয়ে তাদের মধ্যে নতুন ইস্যু তৈরি হয়। তবে পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের জেরেই শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই দুই গ্রুপের অত্যাচারেই এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ ছিল।

এলাকাবাসীএকই গ্রামের আরেকজন জানান, ৪ দিন আগে কবির আখঞ্জি লন্ডন থেকে দেশে আসেন। শুক্রবার জুমার নামাজে মসজিদ কমিটি গঠন নিয়ে আপত্তি তুললে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর ফলশ্রুতিতে সংঘর্ষ।

এদিকে জোড়া খুনের পর দুই গ্রুপের লোকজন গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে মেম্বার মোশাহিদ মিয়া বলেন, ‘কবির আখঞ্জির অত্যাচারে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আর চেয়ারম্যান তো অশান্তি করতোই। নিজ নিজ স্বার্থের জন্য তারা গ্রামের প্রতিটি বিষয়ে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রাখতো।’

police

চেয়ারম্যান আব্দাল আখঞ্জির বলেন, ‘আমার গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন কবির আখঞ্জি। আধিপত্য বিস্তার,সাদা মাটি কাটার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে শালিসে নিষ্পত্তি হয়েছিল। শুক্রবার মসজিদ কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। শুনেছি মসজিদ কমিটি গঠনের বিরোধিতা নিয়েই সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।’ তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মেম্বারের লোকজনের সঙ্গে তার কোনও ধরনের বিরোধ নেই।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) নাজিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার রাত পর্যন্ত দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। 

/এসটি/