এক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েক লাখ হাওরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রথম দফা অকাল বন্যায় ফসল হারিয়ে তিন লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একের পর এক ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে চোখের সামনে তলিয়ে গেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার জমির ফসল। গত বছরও অকাল বন্যায় হাওরবাসীর বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। তবে সে সময় দেরিতে পানি আসায় স্থানীয় কৃষকরা কিছু ধান কেটে গোলায় তুলতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ বছর কাঁচা ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাই গবাদি পশু ও মানুষের খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি খাদ্য সহায়তার বাইরে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
এছাড়া চৈত্রের বন্যার পর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে শ্রাবণের বন্যায় নষ্ট হয়েছে রোপা আমন ও বীজতলা। ফলে অগ্রায়ণ মাসের ধান তারা ঘরে তুলতে পারবেন না।
স্থানীয়রা জানান, হাওরাঞ্চল বছরের ৬ থেকে ৮ মাস জলমগ্ন থাকে। এ সময় হাওরের চারদিকের বিশাল জলরাশি গ্রামগুলোকে ঘিরে রাখে। মাছ ধরা ও কৃষিকাজ ছাড়া হাওর এলাকায় বিকল্প কোনও কর্মসংস্থান নেই। তাই হাওর পাড়ের মানুষজন কর্ম সংকটে ভোগেন। এ অবস্থায় হাওর এলাকায় এগ্রোফিসারি স্থাপন করে বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানান তারা।
হাওরপাড়ের লোকজন জানান, বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় হতদরিদ্র মানুষ উজানের জেলাগুলোতে কাজের সন্ধানে ছুটে যায়। এ বছর উজানে বন্যা হওয়ায় কাজের জন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাদের। ফলে অভাব তীব্র আকার ধারণ করছে।
রমজান বানু বলেন, ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকার ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা দেয়। এতে তাদের পরিবারের ১৫ দিন যায়। বাকি দিনগুলো অনাহারে অর্ধাহারে কাটে। কারণ একটি পরিবারে সর্বনিম্ন ৬ থেকে ১০ জন শিশু সন্তান রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ তালুকদার বলেন, হাওর এলাকায় দুটি সন্তানের পরিবারের সংখ্যা খুব কম। একেকটি পরিবারে ৫ থেকে ১০ জন লোকজন রয়েছে। ৩০ কেজি চালে তাদের মাস চলে না।
জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার সাজিব বলেন, সরকার যে পরিমাণ কার্ড বরাদ্দ দেয় তাতে সবাইকে ত্রাণের কার্ড দেওয়া যায় না। কার্ডের পরিমাণ বাড়ানো না হলে বঞ্চিতরা সীমাহীন কষ্টের মধ্যে পড়বে। কারণ ফসল নষ্টের পরপর তারা স্বাভাবিক ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। ইচ্ছে করলে বাজার থেকে চড়া দামে চাল কিনতে পারছেন না কৃষকরা।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভিজিএফ কার্ড বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি।
আরও পড়ুন:
‘তিন ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে, নাতিকে হত্যা করেছে, আমি আছি নো-ম্যানস ল্যান্ডে ’