হাতির পায়ের চাপে মাহুতের মৃত্যু

মৌলভীবাজারমৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় একটি পোষা হাতির পায়ের চাপে গণি মিয়া (৪৫) নামের এক মাহুতের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কুলাউড়া উপজেলার মেরিনা চা-বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গণি মিয়ার বাড়ি উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মনছড়া গ্রামে। হাতিটির মালিক জুড়ীর পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন।

পোষা ওই পুরুষ হাতিটির নাম ‘রসগোল্লা’।  জানা গেছে, রসগোল্লাসহ আরও কয়েকটি পোষা হাতি জুড়ী ও কুলাউড়ার সংরক্ষিত বন এলাকায় বিচরণ করে। গাছ টানার কাজে মালিকেরা এসব হাতি ব্যবহার করেন। সম্প্রতি সঙ্গিনীর (নারী হাতি) জন্য রসগোল্লা উন্মত্ত (স্থানীয় ভাষায় ‘মোস্ত’) হয়ে ওঠে।

গণি মিয়ার ছেলে প্রত্যক্ষদর্শী সাজু আহমদ (২০) বলেন, তার বাবা আরেকটি পুরুষ হাতির মাহুত ছিলেন। শনিবার সকালের দিকে রসগোল্লা মেরিনা বাগানের ৮ নম্বর সেকশনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। গণি মিয়া লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার কথা বলেন এবং বিভিন্ন কৌশলে হাতিটি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে হাতিটি উত্তেজিত হয়ে পা দিয়ে তার বুকে চাপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই গণি মারা যান। এরপর হাতিটি পাশের গহীন বনে চলে যায়।

বন বিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’

মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই সময়ে হাতি এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত উত্তেজিত থাকে। এ অবস্থায় তার কাছাকাছি লোকজন গেলে স্বাভাবিকভাবেই সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে। হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

হাতিটির মালিক মঈন উদ্দিনের ছেলে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা আর হাতিটারে নিতে পারছি না। মানুষের ক্ষতি করেই যাচ্ছে।’

কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক খছরুল আলম বলেন, খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে গণির লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজারের ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ সেপ্টেম্বর একই হাতির (রসগোল্লা) আক্রমণে জুড়ী উপজেলার পুটিছড়া এলাকায় মঙ্গল খাড়িয়া মারা যান। এলাকাবাসী জানান, মঙ্গল খাড়িয়ার মৃত্যুর পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় কোনও মামলা না করার শর্তে হাতির মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পরিবারকে এক লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটমাট করেন।

আরও পড়ুন- মৌলভীবাজারে ৯৫৬ পূজা মণ্ডপের ৩৩৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ