এদিকে সিলেট পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ছালাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, কানাইঘাটের লোভাছড়ায় মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) শিশুসহ ছয় জন নিহতের ঘটনায় বুধবার (৮ নভেম্বর) পরিবেশ অধিদফতর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও এখনও সে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাই নিয়োগ হয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের পাথর কোয়ারী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ জন।
জানা যায়, সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা কোম্পানীগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ, জাফলং, কানাইঘাটের লোভাছড়া এলাকার বিভিন্ন পাথর কোয়ারীতে দীর্ঘদিন থেকে পরিবেশ ধ্বংসকারী শক্তিশালী মেশিন ( স্থানীয় ভাবে বোমা মেশিন) দিয়ে বিশালাকার গর্ত করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে এসব এলাকার ভূমি ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে, অবৈধভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাস্কফোর্স গঠন করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেও তা থামানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ‘কোয়ারীতে অভিযানে গেলে কিভাবে পাথরখেকোরা অভিযানের খবর আগে থেকেই পেয়ে যায়? এ থেকে বোঝা যায় প্রশাসনের সখ্যতা আছে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে মামলা হয় কিন্তু এর দৃশ্যমান অগ্রগতি হয় না। গত ২৩ অক্টোবর থেকে এ ১০ মাসে শুধু সিলেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ২৮ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব শ্রমিকের পরিবার কোনও ক্ষতিপূরণও পাচ্ছেন না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির সূত্রে জানা যায়, পরিবেশগত ছাড়পত্র না নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চিকাডোরা মৌজার শাহ আরোফিন টিলা কাটার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ৫৮৭৩/২০০৯) দায়ের করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পরিবেশগত ছাড়পত্র না নিয়ে শাহ আরফিন টিলা কাটার দায়ে ১০নং বিবাদীর ( ১০নং নোটিশ গ্রহীতা মোহাম্মদ আলী, স্বত্বাধিকারী- মেসার্স বসির কোম্পানি, গ্রাম কাঠাল বাড়ি, কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট) বিরুদ্ধে রুল জারি করেন এবং টিলা কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন যা এখনও বলবৎ আছে। আদালতের এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে টিলা কেটে পাথর উত্তোলনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে চলতি বছর এ শাহ আরেফিন টিলায় ১৩ জন পাথর শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
লোকবল সংকটের মধ্যেও পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান সবসময় অব্যাহত আছে জানিয়ে সিলেট পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ছালাহ উদ্দিন বলেন, ‘কানাইঘাটের লোভাছড়ায় পাথর কোয়ারীতে ছয় জন নিহতের ঘটনায় বুধবার (৮ নভেম্বর) পরিবেশ অধিদফতর মামলা দায়ের করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না হওয়াতে আসামিদেরকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক জাফলং, গোয়াইঘাট এবং কানাইঘাটসহ পাথর কোয়ারী এলাকাগুলোতে অভিযানের জন্য প্রতিটি উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছেন। ’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করে পাথর শ্রমিকদের অনবরত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনার পর প্রশাসন সজাগ হয় আর যে সব মামলা দায়ের করা হচ্ছে তা অপমৃত্যুর।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের এ নীরব ভূমিকার ফলে পাথর রাজ্যগুলোতে প্রভাবশালীরা আইন তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনকে কতিপয় ব্যক্তিদের ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করছে। গত মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোম্পানীগঞ্জের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও তারা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে।
এদিকে ভোলাগঞ্জ ও শাহ আরেফিন টিলার পরিবেশ ধ্বংসের কারণে কোম্পানীগঞ্জের পাথর কোয়ারী নিয়ন্ত্রক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার মামলা করা হয়। শামিমসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেছিলেন পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পারভেজ আহমেদ।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুর রহমান খান বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতর কোনও মামলা করলে তারাই তদন্ত করে এবং আসামি গ্রেফতার করে। পরিবেশ অধিদফতরের মামলায় আসামি ধরতে পুলিশের কোনও এখতিয়ার নেই।’
এ ব্যাপারে শামিমের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।