কারাগার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিলেট সফরকালে ‘বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম’ নামের ওই কক্ষটি পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান। সরকারিভাবে ঐতিহাসিক এই স্থানটি সংরক্ষণ করে সেখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি স্তম্ভ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেসময় জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
কারা সূত্র জানায়, কারাগারে ভেতরে যে কক্ষটি এখন বন্দিদের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি টিনশেডের একটি ঘর। এই কক্ষটিকে লাইব্রেরি করার কারণ এখানে বসেই বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছে চিঠি লিখতেন ও বইপত্র পড়তেন। এমনকি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া চিঠিগুলো এখানে বসেই পড়তেন। কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ধরে রাখার জন্য একটি হাতে আঁকা ছবি টানিয়ে রাখা হয়েছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়ার পরও এই কক্ষটি আগের মতোই রেখে দেওয়া হয়েছে। মাঝে মধ্যে রং ও মেরামত করে কক্ষটিকে কোনোভাবে জীবিত রাখা হয়েছে।
১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করার পর জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্নস্থানে সফর শুরু করেন। ওই সময়ে তিনি সিলেট সফরে আসলে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি করে রাখে। কোন মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয় কিংবা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনি কয়দিন ছিলেন সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট কারও জানা নেই।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আবু সায়েম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা শুনেছি এখানে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কয়েকদিন বন্দি রাখা হয়েছিল। যে কক্ষে তিনি ছিলেন সেটি এখন কারাগারের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কক্ষটির সামনে ‘বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম’ লেখা একটি বোর্ড টানানো আছে।” বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কোনও সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই। এখান থেকে শহরতলীর বাদাঘাট এলাকায় নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর হলে তখন সরকার চাইলে যেকোনও ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে।’
সিলেট কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষটিতে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি রাখা হয়েছিল সে কক্ষটি লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার না করে সংরক্ষণ করে রাখলেই এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকতো। এটা শুধু একটি কক্ষ নয়, এটা আমাদের জাতীর ইতিহাসের অংশ। লাইব্রেরির জন্য কারাগারের অন্য একটি কক্ষ ব্যবহার করে এ কক্ষটি সংরক্ষণ করা হোক।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যে কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করে রাখা হয়েছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক বইপত্র রাখা যায়। পাশাপাশি কক্ষটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
সিলেট জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সিলেট কারাগারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে বর্তমান বন্দি রাখার ওই কক্ষটি সংরক্ষণ করা মানে ইতিহাস সংরক্ষণ করা। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছিল। তিনিও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন এই কক্ষটি সংরক্ষণ করে রাখার বিষয়ে।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারাগারে ভেতরে বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামটি দ্রুতই সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’