নির্বাচন নিয়ে সিলেট বিএনপিতে কলহ তুঙ্গে

আরিফুল হক চৌধুরী, বদরুজ্জামান সেলিম ও শামসুজ্জামান জামানসিলেট বিএনপি অনেক বছর ধরেই নানা ভাগে বিভক্ত। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সিলেটে বিএনপির কোন্দল চরমে ওঠে। তখন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সিলেট-২ আসনের এমপি (নিখোঁজ) ইলিয়াস আলীর বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। সিলেটে বিএনপি সাইফুর বলয় ও ইলিয়াস বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ওই সময় সাইফুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে সিলেট বিএনপিতে প্রভাবশালী ছিলেন তৎকালীন নগর বিএনপির সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরী। সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিলেট বিএনপিতে প্রভাব বিস্তার করেন ইলিয়াস আলী। পরে তিনি নিখোঁজ হলে তার অনুসারীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আর সাইফুর বলয়েও ফাটল দেখা দেয়। সিলেট বিএনপির এই গ্রুপিংয়ের রাজনীতি গত প্রায় দেড় যুগ ধরে তাদের যেন নিত্যসঙ্গী। সেই গ্রুপিং এবার চরম আকার ধারণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে।

সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ দিয়েই এবার মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তারা দুজন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকায় এবার সেলিম প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও আরিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা আহ্বায়ক শামসুজ্জামান জামান। সিলেট বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বারবার কেন্দ্রীয় বিএনপি উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কোনও লাভ হয়নি। যার কারণে সিটি নির্বাচনে বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।

আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির উপদেষ্টা এম এ হক বলেন, ‘দলের ঐক্য ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী জোটের শরিক দল জামায়াত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে। জামায়াত যাতে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ায় সেজন্য তাদের একটি মহল নানাভাবে চাপে রেখেছে। যার কারণে তারাও একটু চিন্তিত।’

আরিফুল হক বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখানে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে। তবে আমাদের মধ্যে কোনও প্রতিহিংসা নেই। দলের ঐক্যের প্রতীক ধানের শীষের পক্ষেই সবাই কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থকসহ নগরবাসী ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে আছেন। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত।’

বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমাকে অনেকটা হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে দল থেকেও বহিষ্কার করা হবে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছি, বহিষ্কার করা হলেও আমি নির্বাচন করবো। কারণ, দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি। আগামী ৩০ জুলাই সিলেটের মানুষ তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন। ’

জামান গ্রুপের অনুসারী সিলেট ল’কলেজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই সিলেটে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। এবার নির্বাচনের আগেই সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের প্রশ্নবিদ্ধ একটি কমিটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। আমরা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। যদি নির্বাচনের আগে এই কমিটি বাতিল না করা হয় তাহলে আমি মনে করি পদবঞ্চিতরা বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে থাকবেন না। এমনকি অনেকেই ভোটও দিতে যাবেন না।’

বিএনপি নেতা সামসুজ্জামান জামান একাধিক মামলার কারণে বেশ কিছু দিন ধরে অগোচরে ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবারও তৎপর হয়েছেন। গত বুধবার (৪ জুলাই) নগরের মিরাবাজারে নিজ অনুসারীদের নিয়ে তিনি এক সভা করেন। ওই সভায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আর নির্বাচন নামের প্রহসন দেখতে চাই না। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন চাই। জামানের এই বক্তব্যকে অনেকে আসন্ন নির্বাচনে আরিফুল হকের বিরোধিতা বলেই ধরে নিচ্ছেন।’