সময়মতো সেচের পানি না পাওয়ায় হাওরে ধান চাষ ব্যাহত

পানির অভাবে ধানের চারা হলুদ হয়ে গেছে সেচের পানির অভাবে সুনামগঞ্জের খরচার হাওরে তিন হাজার একর জমি পতিত রয়েছে। পানির অভাবে ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম। পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির পাওনা পরিশোধ না করায় তারা এবছর বোরো মৌসুমের শুরুতে  পানি সেচ না দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের  মজুমদারি গ্রামের মনিরুজ্জামান বলেন, অন্যান্য সময় পৌষ মাসের শুরুতে জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করে ভাসমান পল্টুন কর্তৃপক্ষ। তবে গতবারের পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় তারা পৌষ মাসের শেষে পানি দিয়েছে তাই জমি অনাবাদি রয়েছে।

পানির অভাবে ধানের চারা হলুদ হয়ে গেছে ধরেরপাড় গ্রামের  অখিল বিশ্বাস বলেন, সময়মতো  সেচের পানি না পাওয়ায় খরচার হাওরের কয়েক হাজার একর জমি পতিত থাকবে। মৌসুমের শুরুতে জমিতে পানি সেচ না দেওয়ায় আবাদি জমিতে এখন ঘাস জন্মেছে। এগুলো পরিষ্কার করে জমিতে ফসল লাগাতে হলে রোপনের সময় চলে যাবে। তখন ফলন ভালো পাওয়া যাবে না।

মাঝাইর গ্রামের সুবোধ দাস বলেন, আগে প্রতিকেয়ার জমিতে পানি সেচ দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা লাগতো। এবছর সমিতির লোকজন প্রতিকেয়ার জমিতে পানি সেচের জন্য ৬০০ টাকা করে নির্ধারণ করেছে। এতে কৃষক আর্থিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পানির অভাবে জমিতে ফাটল ধরেছেজনতা বাজারের কালী কুমার দাস বলেন, ‘গেলবারের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এলাকার শতশত কৃষকের জমি পতিত থাকবে এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’

পলাশ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডেও ইউপি সদস্য আব্দুস সামাদ বলেন, সেচের পানি সময় মতো না দেওয়ায় ধরেরপাড়,আদুখালী, পিয়ারিনগর,বাগগাঁও,লালারগাঁও, মজুমদারি, গৌবিন্দনগর,পুকুরপাড়,বাজিতপুর,মাঝাইরসহ ১০টি গ্রামের কৃষক মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

Haor pic 2 Sunamgonjধরেরপাড় গ্রামের রাম কানাই দাস বলেন, গ্রামের কাউকে সমিতির লোকজন গেলবারের পাওনা টাকার বিষয়টি জানায়নি। তারা নিজেদের মতো করে প্রকল্পের টাকা আদায়ের লোক নিয়োগ করে। কৃষকরা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে জমিতে পানি সেচ নেয়। এবছর দেরিতে পানি দিয়ে পুরো হাওরের ফসল হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে সমিতির লোকজন।  নিশিকান্ত দাস বলেন, পানির অভাবে জমিতে রোপন করা ধানের চারা লাল রঙ ধারণ করেছে এছাড়া ধানের চারাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  ভাদেরটেক গ্রামের চলতি নদীর পানি দিয়ে তারা প্রতিবছর জমি চাষাবাদ ও ধান রোপন করেন। অন্যান্যবার মৌসুমের শুরুতে এলাকার সেচের পানি পেয়েছেন  কিন্তু এ বছর গেলবারের পাওনা টাকা পরিশোধ  না করায় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পানি দিয়েছে  মৌসুমের মধ্যভাগে তাই পানির অভাবে জমিতে রোপন করা ধানের চারা পানির অভাবে লাল রঙ ধারণ করেছে  আবার পশ্চিম দিকে আবাদি কৃষি জমিতে পানির অভাবে উৎপাদন হয়েছে ঘাস ও নানান আগাছা। সেখানে গরু ঘাস খাচ্ছে। সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত খরচার হাওর।

Haor pic 1 Sunamgonjহাওরটি দু’টি উপজেলার মানুষের অন্যতম শস্যক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত।  ফলে খরচার হাওরের একটি বিশাল অংশ অনাবাদি থাকা ও দেরিতে জমি রোপনের কারণে ফসল আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

খরচার হাওর স্বাবলম্বী কৃষক সমবায় ভাসমান সেচস্কিমের সদস্য আব্দুল কদ্দুছ  বলেন,  ‘আমরা এখন পানি সেচ দিচ্ছি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তবে তার এ যুক্তি মানতে নারাজ স্থানীয় কৃষকরা।’

Haor pic 4 Sunamgonjপলাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান  আব্দুল কাঈয়ুম মাস্টার জানান,  টাকার অভাবে পানি না দেওয়ার বিষয়টি কৃষকরা কাউকে জানায়নি। পানি না পাওয়ায় জমি পতিত পড়বে ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন  (সেচ)  সুনামগঞ্জের  সহকারী প্রকৌশলী হুসাইন মুহাম্মদ খালেদুজ্জামান জানান, ‘বকেয়া টাকা পাওনার জন্য সেচের পানি দিচ্ছে না এ বিষয়টি কেউ আমাদের  জানায়নি। যদি এরকম অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে স্কিমের বিরোদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’