সন্তানের হত্যাকারীর কঠোর শাস্তি দাবি করে ওয়াসিমের বাবা বলেন, ‘আমি ওয়াসিমের হত্যাকারী বাসচালক ও হেলপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।’
ওয়াসিম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামের মো. আবু জাহেদ মাহবুব ঘোরী ও ডা. মীনা পারভিনের একমাত্র সন্তান।
শনিবার বিকেলে ওয়াসিমসহ ১১ জন শিক্ষার্থী নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তারা সিলেট রোডের উদার পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। ভাড়া নিয়ে বাসের হেলপারের সঙ্গে তাদের তর্কবির্তক হয়। একপর্যায়ে বাসের হেলপার মাসুক আলী ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর ওয়াসিমের পায়ের ওপর দিয়ে বাসের পিছনের চাকা চলে যায়। স্থানীয় লোকজন ওয়াসিমকে দ্রুত উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ২টার দিকে ওয়াসিমের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
ওয়াসিমের খালু কামরুল হাসান জানান, এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়। এ হত্যাকাণ্ডে কঠোর শাস্তি হলে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
নিহত ওয়াসিমের দাদু রহিমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাসের হেলপার ও ড্রাইভারের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই বলছিলেন।
নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাবেদ মিয়া বলেন, ‘ওয়াসিম এলাকার মেধাবী ছাত্র ছিল। তাকে হারিয়ে পুরো এলাকা শোকাহত। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।’
ওয়াসিমের লাশের সঙ্গে আসা সহপাঠীরা জানান, দেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় না। বিচার হলে ভবিষ্যতে কোনও চালক কিংবা হেলপার এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে সাহস পাবে না। তারা এ ঘটনার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ মিলাদ গাজী জানান, আমি প্রশাসনকে বলেছি এ হত্যাকাণ্ডে শক্তহাতে আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। দোষীদের শক্ত বিচার হলে অন্যরাও বুঝবে এ ধরনের ঘটনা করলে রেহাই পাওয়া যায় না। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত ও শোকাহত। নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই।
এদিকে দুপুরে বাসচালক ও হেলপারের বিচারের দাবিতে মহাসড়কের দেবপাড়ায় মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে উদার পরিবহনের রোড পারমিট বাতিলসহ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে দুপুর ২টায় গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ওয়াসিমকে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীসহ এলাকার বিশিষ্ট লোকজন অংশ নেন।