তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড় গ্রামের শ্রমিক সর্দার আমির হোসেন বলেন, ‘ফাল্গুন মাসে হরিপুর গ্রামের দুইজন বড় গিরস্থ তাদেরকে ধান কাটার জন্য বায়না (অগ্রিম টাকা) দিয়েছিলেন। কথা ছিল ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে ওই দুই কৃষকের ধান কেটে দেবেন। কিন্তু অনেক কষ্ট করে মাত্র ১৭ জন শ্রমিক যোগাড় করতে পেরেছেন। বালুমহালে মজুরি বেশি থাকায় গ্রামের বেশিরভাগ যুবক সেখানে কাজ করতে যায়। তাই ধান কাটার শ্রমিক সংকট।’
হরিপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক আফতাব উদ্দিন বলেন,‘২০/ ২৫ বছর আগে জমি থেকে ধান আনতে কোনও সমস্যা হতো না। খাড়া দিয়ে নৌকায় করে ধান মাড়াই খলায় নিয়ে আসা যেতো। এখন কোন হাওরে খাড়া নেই সড়কও নেই। শ্রমিকরা কাদাপানি ভেঙে মাথায় করে ধান নিয়ে আসে। এতে তাদের কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। তাই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।’
আফরিদ মিয়া বলেন,‘এখন মানুষের আগের মতো গরু-মহিষ নেই। এলাকা বড়বড় কৃষকের গরু-মহিষ আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের গোসম্পদ নেই বললেই চলে। তারা গাভী পালন করেন। তাই ধান পরিবহনে গরুর গাড়ির চল এখন ওঠে গেছে। কৃষক এখন ট্রাক্টরের ট্রলি দিয়ে ধান পরিবহন করেন সেখানে সমস্যা সড়ক না থাকায় ট্রলিও চালানো যায় না।’
রহিম আলী বলেন,‘হাওরের এখন এমন একটা অবস্থা নাও চলে না গাড়িও চলে না। মাথায় বোঝা নিয়ে ধান পরিবহন করতে হয়। শ্রমিকরা সারাদিন জমিতে ধান কেটে ক্লান্ত থাকেন তারা কেউ নেহাত প্রয়োজন ছাড়া মাথায় করে ধানের মুঠ নিতে চান না।’
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ বলেন,গোটা হাওর এলাকা থেকে বছরের এসময় স্পন্ডেলাইটিস ও মেরুদন্ডজনিত সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী আসেন। তাদের অনেকেই ঘাড়ের আঘাতজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। দীর্ঘ সময় মাথায় ভারী বোঝা বহনের করতে তারা এরোগে আক্রান্ত হয়। হাওর এলাকায় কোনও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মাথায় করে ধান পরিবহনের কারণে পিচ্ছিল রাস্তায় পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ড ও ঘাড়ে ব্যাথা পান। অনেক সময় হাত-পা ভেঙে যায় এতে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হয় তাদের।
জেলা কৃষি-সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ সরকার বলেন,‘ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বাস্তাবায়ন করার বিষয়টি তাদের ওপর নির্ভর করে।’
সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় হুইপ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন,‘হাওরের ধান পরিবহনের জন্য ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করছেন। বিশাল হাওর এলাকায় ডুবন্ত সড়ক নির্মাণ করা অনেক সময়ের ব্যাপার ও ব্যয় বহুল পরিকল্পনা। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তা করেছে।’