সুরমার ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটেসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

সুরমার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদসুনামগঞ্জে সুরমা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সদর, দোয়ারাবাজার,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ,ছাতক,জামালগঞ্জ উপজেলার ৩০টি গ্রামের বসতবাড়ি,ফসলি জমি,স্কুল-মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলেও তা রোধ করতে সংশ্লিষ্টদের কোনও উদ্যোগ নেই।

নদী ভাঙনের শিকার স্থানীয়রা জানান, নদীর পানি যখন বাড়তে থাকে, আবার সেই পানি যখন নামতে থাকে— তখন তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি ও স্থাপনা ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও তা কোনও কাজে আসছে না। ফলে প্রতিবছরই নদী তরিবর্তী জনপদের আয়তন  ছোট হয়ে আসছে। নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অচিরেই পাঁচটি উপজেলার কয়েকশ’ ঘরবাড়ি, কৃষিজমিসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

সুরমার ঝুঁকির মুখে স্থানীয় মসজিদসদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের ইনাতনগর গ্রামের আমিরুন্নেছা বলেন,  ‘সুরমা নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে তিনি হারিয়েছেন তার কৃষি জমি ও গাছপালা। নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন গোয়ালঘর ও বসত বাড়ির সামনে চলে এসেছে। এই বর্ষায় বাড়িটি হয়তো রক্ষা পাবে, কিন্তু শুষ্ক মৌসুম এলে বসত ঘরটি আর রক্ষা করা যাবে না।’ তিনি জানান, শেষ সম্বল  ঘরটি চলে গেলে তাদের পরিবারের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না।

এ্কই গ্রামের বাসিন্দা চাঁনমালা বেগম জানান, কয়েক বছরের ভাঙনে তাদের কৃষি জমি, বাঁশের ঝাড়সহ মূল্যবান স্থাপনা নদীতে চলে গেছে। তার পরিবারের ৩০ শতক জমি ছিল,এখন তা পাঁচ শতকে এসে দাঁড়িয়েছে। ২৫ শতক জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

গৃহবধূ জয়তারা বিবি জানান, ‘নদীতে তার বসত ঘর,বাঁশের ঝাড়, আম- কাঁঠালের বাগান, তিনটি নারিকেল গাছ চলে গেছে। এখনও নদী ভাঙন থেমে নেই। ভরা বর্ষায় নদী না ভাঙলেও হেমন্তে ও বর্ষার শুরুতে ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘পানির তীব্র স্রোতে আর চাপে  নদী নীচের দিকের মাটি সরে গিয়ে একের পর এক স্থাপনা নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। যেকোনও সময় তাদের বসতবাড়ি নদীতে চলে যাবে।  

সুরমার ভাঙনআব্দুল জলিল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন চলতে থাকলেও কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভাঙন আগ্রাসী আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ বালি ভর্তি করে নদীতে ফেললেও তা দিয়ে ভাঙন আটকানো যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ইনাতনগর গ্রামের ৩০টির মতো বসতঘর নদীতে চলে গেছে। এসব পরিবার বাস্তুভিটে হারা হয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে নদী ভাঙনের ফলে তারা তিলে তিলে নিঃস্ব হয়েছেন। ঈদগাহ, মাদ্রাসা, মসজিদ, খেলার মাঠ সবই নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন যাচ্ছে গরিব মানুষের বসত ঘর।’

দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিলশাদ আলী বলেন, ‘সুরমা নদীর ভাঙনে আমবাড়ি বাজার, ধনপুর, হাজারিগাঁও গ্রামের অনেক বসতঘর নদীতে চলে গেছে। ধনপুর  গ্রামের জামে মসজিদ, আমবাড়ি বাজারের দোকানপাট সব নদীতে চলে গেছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুরো আমবাড়ি বাজার, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবনও  নদীগর্ভে চলে যাবে।’

সুরমার ভাঙনের শিকার বসতবাড়িধনপুর গ্রামের নবাব মিয়া বলেন, ‘নদী ভাঙনের শিকার এলাকাবাসীর অভিযোগ— দীর্ঘদিন যাবত নদী ভাঙনের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কার্যকর স্থায়ী কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।’

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষন) খুশি মোহন সরকার বলেন, ‘জেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোর ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এগুলো অনুমোদন পেলে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।’