জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, সদরের ৯টি, বিশ্বম্ভরপুরের ৫টি, তাহিরপুরের ৭টি, জামালগঞ্জের ৪টি, ছাতকের ৫টি, শাল্লার একটি, দোয়ারাবাজারের ২টি, জগন্নাথপুরের ৩টি ও ধর্মপাশা উপজেলার ৪টি সহ ৬১টি ইউনিয়ন এবং ৪টি পৌরসভার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন। দুর্গতদের জন্য ১২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার ১৯৪টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ৯ উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ৬৬ হাজার ৮৬৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৪১০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, দিয়াশলাই, মোমবাতি, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
নুতনপাড়া এলাকার বাসিন্দা রনবীর দাস বলেন, ‘আজ (রবিবার, ২৮ জুন) দুপুর থেকে সুরমা নদীর পানি উপচে হাওরে প্রবেশ করায় বাড়িঘর পানিতে ডুবে আছে।’
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের চেয়ারম্যন ফুল মিয়া বলেন, তার ইউনিয়নের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।
লালপুর গ্রামের জালাল মিয়া বলেন, গ্রামের এমন কোনও বাড়ি নেই যেখানে পানি ওঠেনি। সড়কে নৌকা চলে। লোকজন ঘর থেকে বাইরে যেতে পারছে না।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী জানান, পুরো হাওর এলাকা ঢলের পানিতে নিমজ্জিত। নদীর পানি হাওরে গিয়ে পড়ায় পানির চাপ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। ছাতক শহর, ছাতক সদর, কালারুকা, চরমহল্লা, জাউয়াবাজার, দোলারবাজার, ভাতগাঁও, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, সিংচাপইড়, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ছাতক-দোয়ারা, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-জাউয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারণ সড়ক, পালপুর-সিংচাপইড় সড়ক, বোকারভাঙ্গা-মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের একাধিক অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, নদীর পানি কমতে শুরু করছে। তবে হাওরের পানি বেড়েছে। উজানে ৫৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উজানে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশাসন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।