প্রতিবন্ধী কিশোরকে মাতাল করে আপত্তিকর ভিডিও করায় ৮ জন আটক





সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাটে মদ খাইয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোর (দেখতে শিশুদের মতো) শরিফ মিয়াকে (১৩) নিয়ে টিকটকসহ বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের ঘটনায় ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

এ ঘটনায় রবিবার (২৩ আগস্ট) রাতে শরিফের বড় ভাই শামীম বাদী হয়ে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন।
আটককৃতরা হলো, উপজেলার ৫নং বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের শেখ আ. রহমানের ছেলে আলম শেখ (২৩), আনোয়ার হাসেন রুমানের ছেলে তারেক (২২), নাজিম উদ্দিনের ছেলে দীপু (২২), বাচ্চু মিয়ার ছেলে রনি (১৭), বাদাঘাট গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ্ (১৬), ৪নং বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মৃত আ. গফুরের ছেলে মোজাম্মেল হক (২২), হাবিবুর রহমান সংগ্রামের ছেলে সাগর (২১) এবং দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পাগলপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে মনির মিয়া (১৯)। রবিবার রাতে আটককৃতদের এবং ভিকটিম শরিফকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে আটককৃতদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় শরিফের বড় ভাই শামীমের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জুলাইয়ের শেষদিকে বাদাঘাট বাজারের সততা স্টোরের মোজাম্মেল হকের ফেসবুক আইডি থেকে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিশোর শরিফের ছবি ও একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। ওই ভিডিওতে শরিফ জানায়, বাদাঘাটের কয়েকজন যুবক তাকে জোরপূর্বক মদ খাইয়ে বিভিন্ন রকমের টিকটক ভিডিও বানিয়ে তা ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে।
বিষয়টি সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএমের নজরে এলে তার নির্দেশনায় তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান ও বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মাহমুদুল হাসান গোপনে তদন্ত শুরু করেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরকে দিয়ে এমন আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করায় জেলা সদরসহ গোটা উপজেলায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। রবিবার দুপুরে শরিফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

শরিফ মিয়া উপজেলার ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের ঢালারপাড় (লাউড়েরগড়) গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। ৯ ভাই বোনের মধ্যে সপ্তম সে।
শরিফের মা জানিয়েছেন, জন্মের সময়ই শরিফ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা ছোট ছিল। স্থানীয় ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়ে অনেক টাকা পয়সা খরচ করেও স্বাভাবিক করা যায়নি। ছোটবেলা থেকেই সে বাড়ির বাইরে থাকে। চেষ্টা করেও তাকে বাড়ি নেওয়া যায় না।

তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, ভিকটিমের বড় ভাই শামীম বাদী হয়ে আটককৃত ৮ জনসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া পলাতক অন্য দুই আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা সত্য। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।