বিদ্যুৎ, পানি ও যাতায়াত নিয়ে সমস্যা

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের শতাধিক ঘরে তালা

মুজিববর্ষে হতদরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ থমকে গেছে হবিগঞ্জে। সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে বিদ্যুৎ, পানি ও যাতায়াত নিয়ে নানা সমস্যাই এর জন্য দায়ী।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে হবিগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৪৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে ৩৩৫টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এর মধ্যে চুনারুঘাট ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় গৃহনির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ, সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ও যাতায়াত সমস্যার কারণে ১০৪টি ঘরে ঝুলছে তালা।

চুনারুঘাট উপজেলার ইকরতলীতে ৭৪টি ভূমিহীন পরিবারকে গত ২৩ জানুয়ারি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঘরে উঠতে অনীহা প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। ৭৪টি ঘরের মধ্যে মাত্র ২১টিতে মানুষ বসবাস করছেন। বাকি ৫৩টি ঘরে ঝুলছে তালা।

বসবাসকারীদের অভিযোগ, ওই এলাকায় কাজের সুযোগ নেই। যাতায়াতের ব্যবস্থাও নাজুক। তিন মাসেও দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। এছাড়া ৭৪টি পরিবারের জন্য রয়েছে মাত্র চারটি টিউবওয়েল।

ইকরতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘এখানে পানির খুব সমস্যা। আমরা এখানে ২১টি পরিবার থাকি। টিউবওয়েলের চারপাশ খোলামেলা। গোসল করতে গেলে নারীদের সমস্যা হয়। এত মানুষের গোসল, থালা-বাসন ধোয়া সবই টিউবওয়েলে করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে জমি নেই, বিদ্যুৎ নেই, রাস্তাঘাট ভালো না, মানুষের যাতায়াত নেই। কাজও নেই। আমার স্বামী অনেক দূরে গিয়ে যা কাজ পায় তা-ই করে। অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। এভাবে বেশি দিন থাকা সম্ভব না।’

এ প্রসঙ্গে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন, ‘এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগের বরাদ্দ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কোনও টাকা চাওয়া হয়নি। যারা ঘর পেয়েছেন কিন্তু এখনও আসেননি তাদের আসার জন্য বলা হচ্ছে। এরপরও যদি তারা না আসেন তবে বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

একই চিত্র আজমিরীগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় ৮৮টি ঘর বানানো হলেও হস্তান্তর হয়েছে ৭০টি। এরমধ্যে কাকাইলছেও এলাকায় বানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ৫১টি ঘর। এসব ঘরের চাবি হস্তান্তর হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ, সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা নেই। তাই ওঠেনি একটি পরিবারও।

৫১টি পরিবারের জন্য নেই নলকূপ ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বর্ষাকালে পানি ওঠারও আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এসব কারণে কুশিয়ারা নদীর তীরঘেঁষা আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৫১টি ঘরে ঝুলছে তালা।