এক বছরে শেষ হওয়ার কথা, দেড় বছরেও হয়নি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের দুর্যোগ সহনীয় ঘরের নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ঘরের কাজ শেষ না হওয়ায় রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর সদর বাদাঘাট, শ্রীপুর উত্তর, শ্রীপুর দক্ষিণ, বড়দল উত্তর, বড়দল দক্ষিণ, বালিজুরিসহ সাত ইউনিয়নের অসহায় ভূমিহীন 'ক' শ্রেণির পরিবারের জন্য ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০টি দুর্যোগ সহনীয় ঘর বরাদ্দ দেয় সরকার।

প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এসব ঘরের মধ্যে ২৮টি ঘরের কাজ শেষ হলেও বাদাঘাট ইউনিয়নে রাজারগাও ইকর আটিয়া গ্রামের মহামায়া দাস (৬৪) ও বিন্নাকুলি গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রুহুল আমিনের ঘরের কাজ ১৮ মাসেও শেষ হয়নি। অথচ এক বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, রুহুল আমিনের ঘরের ইটের গাঁথুনির কাজ শেষ করে গাঁথুনির ওপর কাঠের ফ্রেম লাগানো হলেও চালে টিন দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ দুই মাস ধরে ওপরের লাগানো কাঠের ফ্রেমে টিন দিয়ে ছানি না দেওয়ায় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে কাঠ। আস্তর, দরজা-জানালা, রান্নাঘর, মেঝে তৈরি, টয়লেটসহ বেশির ভাগ কাজ এখনও শেষ হয়নি।

এদিকে মৃত বজ্রনাথ দাসের স্ত্রীর ঘরে সবুজ রঙের টিনের চাল লাগানো হলেও আস্তর, জানালা, রান্নাঘর টয়লেটসহ সব কাজ বাকি। ৪২০ বর্গফুট আয়তনের ঘরগুলোতে দুটি বেডরুম, একটি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর থাকার নির্দেশনা রয়েছে।

এক বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল সরকারি ঘরের কাজ, দেড় বছরেও হয়নি

বিন্নাকুলি গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, দরজা-জানালা, আস্তর, রান্নাঘর, টয়লেটসহ সব কাজ বাকি। ১৮ মাসেও ঘরের কাজ শেষ হয়নি। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছে। কবে ঘরের কাজ শেষ হবে তাও জানি না। দুই মাস হলো ঘরের ওপরে কাঠ লাগানো হয়েছে। এখন বৃষ্টিতে ভিজে কাঠ নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বারবার বিষয়টি জানিয়েছি। তারপরও ঘরের কাজ শেষ হচ্ছে না।

রুহুল আমিনের মা মিনারা খাতুন বলেন, সরকার আমার ছেলেরে ঘর দিয়েছে ভালোভাবে বসবাসের জন্য। কিন্তু এখনও ঘরের কাজ শেষ হয়নি।

রুহুল আমিনের স্ত্রী ছুরাহা বেগম বলেন, দুই ছেলে, স্বামী-স্ত্রীসহ আমাদের চারজনের সংসার। ঘর পাওয়ার আশায় ১৮ মাস ধরে অপেক্ষা করছি। এখনও কাজ শেষ হয়নি। আমরা রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে ভাঙা ঘরে বসবাস করছি।

ইকরহাটি গ্রামের মহামায়া দাস বলেন, অনেকবার বলেও ঘরের চালে টিন লাগাতে পারিনি। এখনও অনেক কাজ বাকি। কবে ঘরের কাজ শেষ হবে জানি না।

বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঠিকাদারের অবহেলার জন্য ঘরের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণের প্রকল্প স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে ঘরের কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বাদাঘাট ইউনিয়নের দুটি ঘরের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ঘর দুটির কাজ দ্রুত শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা এখনও কাজের পুরো বিল দিইনি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চূড়ান্ত বিলের টাকা দেওয়া হবে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।