রেজিস্ট্রার অফিসের বারান্দায় সন্তান প্রসব!

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে রেজিস্ট্রার অফিসের বারান্দায় সন্তান প্রসব করেছেন রেসমিনা বেগম (২৪) নামের এক প্রসূতি। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকালে এ ঘটনা ঘটে। রেসমিনা দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ডুলকর গ্রামের রুবেল মিয়ার স্ত্রী।

রুবেল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে আমরা তাৎক্ষণিক দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে প্রাইভেট চিকিৎসা করাই। পরে ডাক্তারের কথায় আবার হাসপাতালে আনি। এখানে এলে আমার স্ত্রীকে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই সিলেট নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ধাত্রী (মিডওয়াইফ)।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকটা নিরুপায় হয়ে হাসপাতাল থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলে হাসপাতালের প্রধান ফটকের কিছু দূরে গাড়ির পাশে গেলে প্রসবের ব্যথা বেড়ে যায়। পরে রাস্তার পাশে একটি অফিসের বারান্দায় নবজাতকের জন্ম হয়। বর্তমানে মা এবং নবজাতক মেয়ে সুস্থ আছে। আমার কাছে দিরাই হাসপাতালের কোনও কাগজ নেই, তবে প্রাইভেট ডাক্তারের কাগজ আছে।’

তবে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ শিপ্রা রানী দাস বলেন, ‘আমি আরেকজন প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছিলাম। ওই প্রসূতিকে (রেসমিনা) সিটে বসে অপেক্ষা করতে বলেছি। কিন্ত রেসমিনার স্বামী অপেক্ষা না করেই তাকে নিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। পরে জানতে পারি, তারা সিলেটে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগেই সন্তান প্রসব করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার স্বামী হাসপাতাল থেকে কোনোরকম চিকিৎসা ও রেফার্ডের কাগজপত্র না নিয়ে নিজ উদ্যোগে সব করেন। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও অবহেলা বা গাফিলতি নেই। অযথা এখন দোষারোপ করছেন তারা।’

ওই সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিদ্যুৎ রঞ্জন দাস বলেন, ‘আমি সকালে জরুরি বিভাগে ডিউটিতে ছিলাম। আমার কাছে রেসমিনা নামে কোনও রোগী আসেননি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্বাধীন কুমার দাস বলেন, ‘কর্তব্যরত চিকিৎসক কে ছিল আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে গুরুত্বসহকারে দেখছি।’

সিভিল সার্জন মো. শামছ উদ্দিন বলেন, ‘রেসমিনাকে দিরাইয়ে একটি প্রাইভেট চেম্বারে ডাক্তার দেখান স্বামী। ওই ডাক্তার তাকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পরামর্শ দেন। তারপর তিনি ভর্তির প্রচলিত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং জরুরি বিভাগের ডাক্তারকে না দেখিয়ে কোনও কাগজপত্র ছাড়াই মিডওয়াইফের কাছে চলে যান। মিডওয়াইফ তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগেই প্রসূতির স্বামী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন তাকে সিলেট নেওয়ার জন্য। এ সময় তার সন্তান প্রসব হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রেসমিনা নামে কোনও প্রসূতিকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়নি বা কোথাও রেফার্ড করা হয়নি। দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ শিপ্রা রানী দাস আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কোনও ধরনের চিকিৎসার গাফিলতি হয়নি। একজন প্রসূতিকে রেফার্ড করলে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ সরকার এক হাজার ৫০০ টাকা ও স্বাভাবিক প্রসব করলে ৫০০ টাকা প্রদান করে। এজন্য রেফার্ডের অনেক অফিসিয়াল কাগজ রোগীকে দিতে হয়।’