‘তরে বাঁইন্ধা রাখমু, পুলিশ আইয়া নিবো’

৯ মাসের বকেয়া বিল আদায় করতে গিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা। বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের মারতে ক্রিকেট ব্যাট নিয়েও তেড়ে আসেন রুহুল আমীন নামে ওই নেতা। এ সময় তিনি গালিগালাজ করে পেটানোর হুমকিও দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত রুহুল আমীন নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওই গ্রামের রজব উল্লাহর ছেলে।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নবীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আলীবর্দী খান সুজন বাদী হয়ে রুহুল আমিনকে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রুহুল আমীন ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের মারতে বারবার তেড়ে যান। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি সরকারি দলের লোক। আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তরে বাঁইন্ধা রাখমু (বেঁধে রাখবো), পুলিশ আইয়া নিবো। এ ছাড়া গালিগালাজও করেন, পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের দা দিয়ে কোপানোর হুমকিও দেন তিনি।

পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র বলছে, ৩৫০/১২৪০ হিসাব নম্বরের মিটারটি রুহুল আমিনের পিতা রজব উল্লাহর নামে রয়েছে। বর্তমানে রুহুল আমিন ওই মিটারটি ব্যবহার করছেন। তাদের হিসাবে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ১৮৪ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। বিল পরিশোধের জন্য বারবার তাগিদ দিলেও কর্ণপাত করেননি তিনি।

মঙ্গলবার বিকালে বকেয়া বিল আদায়ের জন্য নবীগঞ্জ উপজেলার দত্তগ্রামের রুহুল আমিনের বাড়িতে হাজির হন নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পলাশ মাহমুদ, সহকারী এনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর মাকসুদ আহমেদসহ ৬-৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ সময় বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তারা। এতে ক্ষিপ্ত হন রুহুল আমিন। পরে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মচারীদের মারতে বারবার তেড়ে যান।

অভিযুক্ত রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার কিছু বকেয়া বিল ছিল। এ জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা আমার বাড়িতে যান, আমি বাড়িতে না থাকায় মোবাইল ফোনে তাদের কাছে কিছুক্ষণ সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু  সময় না দিয়ে তারা আমার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর ওনাদের সঙ্গে আমার বাগবিতণ্ডা হয়। আমি পরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বকেয়া বিল পরিশোধও করেছি।’

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নবীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আলীবর্দী খান সুজন বলেন, ‘৯ মাসের বকেয়া বিল আদায়ের জন্য কয়েকজন রুহুল আমিনের বাড়িতে যায়। এ সময় বিল পরিশোধ না করায় তার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের লোকজনকে মারতে ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়ে তেড়ে আসেন ও গালিগালাজ করেন। পরে তিনি বকেয়া বিল পরিশোধ করেছেন। তবে তার বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইতোমধ্যে নবীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. ডালিম আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বকেয়া বিল চাইতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, বিষয়টি দুঃখজনক।’

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত রুহুল আমিন এর আগেও নানা কারণে আলোচনায় ছিলেন। ২০১৬ সালে নবীগঞ্জে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করে আটক হন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।’