শাল্লায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে ৪০ হেক্টর জমির ধান 

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার দাড়াইন নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওর ডুবে গেছে। সেই সঙ্গে হাওরের ৪০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। 

মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে বাঁধ ভেঙে হাওর ডুবে যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত হাওরের ৪০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। তবে বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার বাইরে। গত তিন দিন ধরে কৃষকরা মাটি কেটে বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে চেয়েও পারেননি। 

স্থানীয় কৃষকরা এজন্য পাউবোকে দোষারোপ করেছেন। তাদের অভিযোগ, শাল্লা ব্রিজের পাশে হাওর রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্প দিলে অকাল বন্যায় চোখের সামনে তলিয়ে যেতো না এসব ফসলি জমি। অন্যান্য বছর এই জায়গায় প্রকল্প দেওয়া হলেও এবছর না দেওয়ায় ডুবে গেলো হাওরের ৪০ হেক্টর জমির ফসল।

badh

শাল্লার ডুমরা গ্রামের কৃষক সুজিত দাস বলেন, চার একর জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। আজ চোখের সামনে কাঁচা ধান তলিয়ে গেলো। রক্ষা করতে পারলাম না।

একই এলাকার কৃষক বাদল দাস বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে মাটি ফেলে। এই বাঁধে কিছু টাকা খরচ করে মাটি ফেললে আজ এমন দশা হতো না কৃষকদের। 

রূপসা গ্রামের কৃষক পংকজ কান্তি দাস বলেন, বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। সারা বছর কীভাবে চলবো, সে চিন্তায় আছি। 

ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের কৃষক অনুপ সরকার বলেন, হাওরে অস্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে সরকার কৃষকদের বিপদে ফেলেছে। নদী খনন না করলে বাঁধ দিয়ে ফসল রক্ষা করা যাবে না। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও ও ডুমরা গ্রামের লোকজন এই হাওরে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। কৃষকদের দাবি, বাঁধ ভেঙে অন্তত ৬০-৭০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কিন্তু কোনও জমির ফসল এখনও কাটা হয়নি। বাঁধ ভেঙে ৪০ হেক্টর জমির ধান ডুবে গেছে।

ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের কৃষক রাজন রায় বলেন, হাওরের সবগুলো ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাঁচার কোনও পথ নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে চলবো সে দুশ্চিন্তায় আছি। বন্যার পানি আসার আগে কয়েকবার প্রশাসনের কাছে গেছি, একটা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু তারা কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। পরে নিজেরাই মাথায় করে মাটি ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করে গেলাম। কিন্তু রক্ষা করতে পারলাম না আমাদের ফসল।  

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব বলেন, 'কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরের প্রায় ৪০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। তবে ওই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার বাইরে। এরপরও আমরা চেষ্টা করেছি, ফসলি জমি রক্ষা করার। কিন্তু পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।'

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুদ্দোহা বলেন, 'এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নয়। স্থানীয়রা ফসল রক্ষায় বাঁধটি দিয়েছেন। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এটি সংস্কারের সুযোগ নেই।'