বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে সুনামগঞ্জে ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি

ভারী বর্ষণ এবং উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সাত ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার তিন ইউনিয়নের এক হাজার ২০০ পরিবার ও এক হাজার গবাদিপশু এবং ছাতক উপজেলার সাত ইউনিয়নের ছয় হাজার পরিবার ও চার হাজার গবাদিপশু পানিবন্দি রয়েছে। দুই উপজেলায় দুইটি আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক পরিবারে আশ্রয় নিয়েছে।

জানা গেছে, দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর, সুরমা, দোহালিয়া ও ছাতকের সদর ইসলামপুর, নোয়ারাই, সিংচাপইর, উত্তর খুরমা, জাউয়াবাজার কালারুকাসহ ১০ ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পানিবন্দি রয়েছে প্রায় আট হাজার পরিবার।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৬ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি বেড়েছে। রাতেও কমেনি সেই পানি। সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

flood4

ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম সোহেল জানান, এই ইউনিয়নের বৈশাকান্দি বাহাদুরপুর, সৈদাবাদ, দক্ষিণ গনেশপুর ও মধ্য গনেশপুরের সহস্রাধিক বাড়ি ঘর ও রাস্তাঘাটসহ ছাতকের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষ ডুবে যাওয়া কাঁচা ঘরবাড়ি ও গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক কৃষক।

নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালেক রাজা বলেন, ‘বন্যায় ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেক গ্রামের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, জেলার সদরে ২০০, বিশ্বম্ভরপুরে ১৫০, তাহিরপুরে ৭০, ছাতকে ১০০ ও দোয়ারাবাজারে ২০০ হেক্টর জমির উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানসহ মোট ৭২০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমির বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। এতে তিন হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সুনামগঞ্জ শহরের সাব বাড়িরঘাট ও পশ্চিমবাজার এলাকায় সুরমা নদীর পানি উপচে দোকানপাটে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া শহরের নবীনগর, ষোলঘর, উকিলপাড়াসহ বেশকিছু নিচু এলাকায় বানের পানি ডুকে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিচু এলাকার সড়কগুলো ডুবে যাওয়া সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

flood3

গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০২ এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ছাতক পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম তুহিন বলেন, ‘ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। বিকাল থেকে পানি স্থির আছে। উপজেলা পরিষদ ১ ফুট পানিতে নিমজ্জিত আছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানের কোনও ক্ষতি হবে না। তবে বাদামচাষিরা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছেন।’

flood1

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিপাত না হলে পানি কমতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত হলে পানি বাড়বে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উজানে মেঘালয়, আসাম ও হিমালয় প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।’

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পানিবন্দি মানুষের জন্য ১৫ মেট্রিক টন চাল, দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচটি উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।