পর্যটকের দেখা নেই মৌলভীবাজারে

মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের দেখা নেই। সড়কের পাশের সবুজ চায়ের বাগানগুলো ফাঁকা।শুধু চা বাগান নয়, জেলার হাওর, জলপ্রপাত ও লেকের কোথাও এবার পর্যটকের তেমন আনাগোনা নেই।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার প্রভাবে এবার ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজারে পর্যটক কম এসেছে। জেলার অভিজাত হোটেলসহ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের অধিকাংশই ফাঁকা।

মৌলভীবাজারের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ। এই দুই উপজেলায় বন্যা না হলেও গত ১৫ জুন থেকে আশানুরূপ পর্যটকের উপস্থিতি নেই। ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনেকেই আগাম হোটেল রিসোর্ট বুকিং দিয়েছিলেন। সেসব বুকিং বাতিলও করে দিয়েছেন। তাই খালি পড়ে আছে এখানকার অধিকাংশ রিসোর্ট, হোটেল-মোটেলগুলো। এতে আবারও ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

শ্রীমঙ্গল নিসর্গ ইকো কটেজের পরিচালক সামছুল ইসলাম বলেন, ‘৩-৪টি রুম বুকিং হয়েছে। বাকিগুলো খালি পড়ে আছে।’

আশানুরূপ পর্যটকের উপস্থিতি নেই

জেলার পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণ হলো—শ্রীমঙ্গল বাইক্কা বিল হাইল হাওর, চায়ের বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি ও ত্রিপুরাদের গ্রাম, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বধ্যভূমি ৭১, শংকর টিলা লেক, ভাউাউড়া লেক, জাগছড়া লেক, ফুলছড়া গারো লাইনের লেক, নিমাই শিববাড়ী, গলফ মাঠ, হরিণ তীর্থ স্থান, হরিণ ছড়া ঝাউবন, বিদ্যাবিল হজম টিলা ও নাহারপুঞ্জিতে শতবর্ষ গিরিখাত। এছাড়া রয়েছে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, ধলই চা বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, খাসিয়া পল্লী, হাম হাম জলপ্রপাত ইত্যাদি।

লাউয়াছড়া ফটকের সামনে ব্যবসায়ী দোলোয়ার মিয়া বলেন, ‘ঈদের দিন বিক্রি হয়েছে ২৫০০ টাকা। পরদিন ৩ হাজার টাকা। এর আগের ঈদে প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। এবার ঈদুল আজহায় পর্যটক নেই।’

জেলার সিনিয়র ট্যুর গাইড সৈয়দ রিজভী ও সোলেমান হাসিব বলেন, ‘সিলেটের বন্যার কারণে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকের দেখা নেই। প্রত্যেকটি হোটেল ও রিসোর্টের ৪-৫টি রুমে গেস্ট রয়েছে। বন্যার আগে জেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটক ছিলেন। ঈদুল আজহায় পর্যটনে ভাটা পড়েছে।’

তারা আরও বলেন, ‘ঈদের দিন বিকালে হবিগঞ্জ ও আর কিছু সিলেট সদরের নানা বয়সী মানুষকে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। দূরের কোনও পর্যটক বা বিদেশি পর্যটক আসেনি।’

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ও বালিশিরা রিসোর্টের চেয়ারম্যান শহীদুল হক বলেন, ‘১০-১২টি রুম বুকিং হইছে। আশানুরূপ বুকিং হয়নি।’

চা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন টি-রিসোর্টের ব্যবস্থাপক শামসুদোহা বলেন, ‘পর্যটক ঈদের আগে থেকে নেই। যাও বুকিং ছিল ঈদুল আজহার আগে অধিকাংশই বাতিল করে দিয়েছেন।’ 

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা শুধু শ্রীমঙ্গল ঘুরতে আসেন না। তারা শ্রীমঙ্গল অবস্থান করে সিলেট রাতারগুল, সাদাপাতা এলাকার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখে আবার রাত্রিযাপন করে শ্রীমঙ্গলে। এ কারণ সিলেটে বন্যার প্রভাবে পর্যটকরা তাদের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। সর্বসাকুল্যে ১০-১২টি বাংলোতে গেস্ট রয়েছে।’

শ্রীমঙ্গল গ্র্যান্ড সুলতান টি-রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ’র অ্যাডমিন অফিসার মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে কোনও বন্যা হয়নি। তবুও আমরা বুকিং পাচ্ছি না। দশ শতাংশ বুকিং হয়নি। শ্রীমঙ্গল একটি আলাদা উপজেলা। বর্ষা মৌসুমে এখানে এসে প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন পর্যটকরা।’

ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা

মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘পর্যটকরা এখানে এসে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আমাদের সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব আলী মিঠুন বলেন, ‘পর্যটন ব্যবসা চাঙা রাখতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সরকারি পর্যায়ে যা যা করণীয়, সেসব করা হবে।’

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পর্যটকদের জন্য জেলা প্রশাসনের দুটি ট্যুরিস্ট বাস চালু রয়েছে।’