‘ছিনতাইকারীরা হত্যা করেছে বুলবুলকে, সংশ্লিষ্টতা নেই বান্ধবীর’

ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে (২২) হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। ওই ছাত্রকে হত্যায় সঙ্গে থাকা বান্ধবীর কোনও সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে তাদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতার তিন জন হলেন—শাবির পেছনের টিলাগাঁওয়ের মো. গোলাব আহমদের ছেলে কামরুল আহমদ (২৯), একই গ্রামের মৃত তছির আলীর ছেলে মো. হাসান (১৯) ও আনিছ আলীর ছেলে মো. আবুল হোসেন (১৯)।

এর আগে, দুপুরে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় হত্যাকাণ্ডের সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে নামে পুলিশ। আটক করা হয় তিন জনকে। তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরমধ্যে আবুল হোসেন খুনের ঘটনায় জড়িত মর্মে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) রাতে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও দুজনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে। তার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কামরুল আহমদ ও হাসানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তারাও স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পরে কামরুলের বাড়ি থেকে নিহত বুলবুলের মোবাইল ফোন ও খুনে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘তদন্তে আমরা জেনেছি, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। শাবির গাজীকালু টিলা এলাকায় সোমবার অবস্থান করছিলেন আবুল হোসেনসহ চার জন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দুজন চলে যায়। সন্ধ্যার পর বাকি দুজনের সঙ্গে যোগ দেয় কামরুল। গাজীকালু এলাকায় সন্ধ্যার পর বান্ধবীসহ ঘুরতে যান শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। ওই এলাকা নির্জন। তাদের সেখানে পেয়ে আবুল হাসান, কামরুল আহমদ ও মো. হাসান মোবাইল ফোন ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।’

ছিনতাইকারীরা বুলবুলের মানিব্যাগ ও ওই ছাত্রীর মোবাইল, ব্যাগ কেন নেয়নি এমন প্রশ্নে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘ওই ছাত্রীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে বলেছে, ঘটনার সময় বুলবুলের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিল। বুলবুলের মানিব্যাগও খোয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতের পর রক্ত দেখে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।’

ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে ওই ছাত্রীর চলে যাওয়া ও কললিস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্কের কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে- এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই ছাত্রী হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, সে জানতে পারে নিহত বুলবুলের জানাজা ক্যাম্পাসে হবে। জানাজায় শরিক হতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। তার চলে আসার পেছনে অপরাধমূলক কোনও কিছু পাওয়া যায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রীর মোবাইল ফোন ও কললিস্ট চেক করে দেখেছি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। তার মোবাইলে কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।’

সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গাজীকালুর টিলার পাশে ছুরিকাঘাত করা হয় শাবির লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে (২২)। পরে তাকে ওসমানী মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী সদরের নন্দীপাড়া গ্রামে। তিনি শাবির শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় মঙ্গলবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।