‘শিক্ষার মান বাড়াতে পরীক্ষার চাপ কমাতে হবে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে হবে। পাঠ্যবইয়ে আবদ্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের মেধাবী করে তোলা সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন ঢাবি উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক

সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি এ সেমিনারের আয়োজন করে।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে দুটি সমাপণী পরীক্ষা বিশ্বের কোথাও নেই। পরীক্ষার চাপ কমালেই শিক্ষার মান বাড়বে। পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের বাইরের জগত সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে, প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জিপিএ-৫ এর পেছনে না দৌড়ে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত হিসাবে গড়ে তোলা উচিৎ। আমাদের ভাবতে হবে, আমরা তাদেরকে মেধাবী হিসাবে গড়ে তুলছি, দেশকে ভালবাসতে শেখাচ্ছি। কিন্তু আজকাল অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে জিপিএ-৫ পাওয়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধাবী হিসাবে গড়ে তুলতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার ভিত হলো প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত হলে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষারও উন্নতি হবে, মানসম্মত হবে।

সেমিনারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা ক্রমান্বয়ে সবাইকে স্কুলে নিয়ে আসতে পারছি। তবে তাদের শিক্ষাকে কতটা মানসম্পন্ন করতে পারছি, সেটা ভেবে দেখা দরকার। কেউ হজম করতে না পারলেও তাকে জোর করে খাওয়ালে সে তো বমি করবেই। একজন শিশুর ওপরে তার উপযোগী শিক্ষার বেশি চাপিয়ে দেওয়া হলে সেটি তার জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করবে। এ বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাসেম প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন, প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণী মর্যাদায় ক্রসপন্ডিং স্কেল দ্রুত বাস্তবায়ন ও দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণসহ বিভিন্ন সুপারিশ প্রস্তাব করেন এসময়।

সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে- জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন, প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণী মর্যাদায় ক্রসপন্ডিং স্কেল দ্রুত বাস্তবায়ন ও দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, সহকারী শিক্ষক থেকে পরিচালক পর্যন্ত শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র উচ্চতর বেতন স্কেল, প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস প্রবর্তন, প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা, অন্যান্য সরকারি চাকরীজীবীদের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নন-ভোকেশনাল ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করা, বিদ্যালয় ভিত্তিক পরীক্ষানীতি প্রবর্তন, নীতি নির্ধারণে সকল স্তরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তিকরণ, প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন অফিস সহকারী নিয়োগ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাব স্কাউটিং কার্যক্রম জোরদার করার জন্য আলাদা কাব অঞ্চল গঠন, শিক্ষকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩-এ সীমাবদ্ধ রাখা, প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম ১২টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা, শিক্ষকদের পদ শূন্য হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণ করা।

সংগঠনের সভাপতি আতিকুর রহমান আখতারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. গাজী সালেহ উদ্দিন, গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কে এম এনামুল হক,
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. সিরাজুল হক আলো, শিক্ষাবার্তার সম্পাদক ও নটরডেম কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক এ এন রাশেদা, কুর্মিটোলা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক সিনিয়র শিক্ষক মো. আবদুস সালাম, চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক রনজিৎ কুমার বণিক, সুন্দরগঞ্জ শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আলম প্রমুখ।

আরও পড়ুন: মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা, বুধবার ভোট
/আরএআর/এএআর/আপ-এআর/