সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহুদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও সহকারী শিক্ষকদের পদন্নোতি বন্ধ রয়েছে। আবার শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য রয়েছে। এছাড়া দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীদের চাকরি জাতীয়তরণ হচ্ছে না। এরকম বেশ কিছু জটিলতার কথা অভিযোগ আকারে তুলে ধরেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, এসব সমস্যার সমাধানে আইনি কোনও জটিলতা নেই। অথচ আমলারা সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
শিক্ষকরা বলেন, ‘আমলাদের কারণেই দেশে প্রাথমিক শিক্ষা মানোন্নয়নও হুমকির মুখে পড়েছে।’ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানের দাবি জানান। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও পদন্নোতি বন্ধ রয়েছে। আইনগত জটিলতা না থাকার পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদন্নোতির জন্য ১১ বার মাঠ পর্যায় থেকে তালিকা পাঠানোর পরও পদন্নোতি হচ্ছে না।’ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে বিদ্যালয়ভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তনেরও দাবি জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এইচ এম আব্দুল হাই বলেন, ‘সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য তিন ধাপ। একইসঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন প্রদান করতে হবে।’ এছাড়া তিনি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্কুলসূচি চালু করার প্রস্তাব করেন।
বরিশাল মহানগর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিত্য কুমার ধর পিএসসি পরীক্ষা বাতিল করার বিরুদ্ধে কথা বলেন। ত্রুটি সংশোধন করে পিএসসি পরীক্ষা চালু রাখার দাবিও জানান তিনি।
এছাড়া অন্যান্য শিক্ষক নেতারা বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা বিলুপ্ত করতে হবে। স্কুলের নাইট গার্ড, অফিস সহকারী ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।’ এছাড়া কেরানিদের পদন্নোতি দিয়ে কর্মকর্তা পদে পদন্নোতির উদ্যোগ বন্ধ করার দাবি তোলেন নেতারা। শিক্ষকদের মধ্য থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত পদন্নোতি দেওয়ারও দাবি করেন নেতারা।
বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের লাকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. আল আমিন বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করি। বাৎসরিক কোনও ছুটি নেই, তিন বছর আগে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে নিয়োগ নবায়নের সময় প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। যারা টাকা দেয়নি তাদের নিয়োগ নবায়ন করা হয়নি।’ তিনি তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানান।
অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান আটটি বিভাগীয় শহরে এভাবে শিক্ষক সমাবেশ করার পর রাজধানীতেও মহাসমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি তুলে ধরবেন, বলে জানান।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান ফিজার। শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দাবি পূরণের চেষ্টা চলছে। তবে আপনাদের কাছে আমার একটি দাবি আছে, তা হোল কোয়ালিটি এডুকেশন। আপনারা আমার এই দাবিটি পূরণের চেষ্টা করুন। কারণ আপনাদের হাতেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, বরিশাল বিভাগীয় সমন্নয় কমিটির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক এস এম ফারুক, বরিশাল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সমন্নয়ক এসএম ইকবাল প্রমুখ।
/আরএআর/এমও/