একা একা ঈদ উদযাপনের অনুভূতি প্রসঙ্গে নওশের সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘একটু তো খারাপ লাগছেই। একটা রুমে সাত জন ছিলাম। এখন আমি একা। পুরো ক্যাম্পাস যেন নীরবে ঘুমিয়ে আছে! পরিবারের বাইরে এবারই প্রথম ঈদ করছি। সকালে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। আমি বাড়িতে না যাওয়ায় আমার ছোট বোন অভিমানে হাতে মেহেদি দেয়নি। জীবনের অন্যরকম একটি অভিজ্ঞতা এটি। মূলত পড়াশোনার জন্যই বাড়ি যাওয়া হয়নি। কিন্তু এখন পড়ায় মন বসছে না!’
নওশের জানান, পুরোপুরি একা তার ঈদ কাটছে বলা যাবে না। কারণ হলের ভাইবেরাদাররাও আছেন। তাদের সঙ্গেই নামাজ পড়েছেন। সকালে হল থেকে এসেছে ঈদের নাস্তা। তিনি বললেন, ‘হলটা যেন আরেকটা ফ্যামিলি। হলের মায়া ছাড়াও কষ্টকর। রুমের চৌকি, চেয়ার, টেবিল সবই আপন হয়ে গেছে। হলে রাইস কুকার আছে। প্রয়োজন হলে নিজেই রান্না করে খাই। এখন রান্না করবো। সন্ধ্যায় সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দেবো।’
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা অনেক আগে শেষ হলেও অনেকেই হল ছাড়েননি। তাদের অধিকাংশই বেকার। কেউ কেউ যুক্ত হয়েছেন রাজনীতির সঙ্গে। চাকরি না পাওয়ায় দীর্ঘদিন বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না অনেকের। বাড়ি গেলে স্বজনসহ সবাই জানতে চান কী করা হয়। তখন তারা উত্তরে কিছু বলতে পারেন না। তাই চক্ষুলজ্জায় অনেকেই বাড়ি যাওয়াকে স্বেচ্ছায় এড়িয়ে চলেন।
তাছাড়া রাজনৈতিক কারণেও ঈদে ঢাকায় থেকে যান হলের বাসিন্দারা। প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য অনেকেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন। গণভবনসহ এসব আয়োজনে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া না করতে বাড়ি যাননি তারা।
সোমবার এসএম হলে গিয়ে দেখা গেলো— দরজা, জানালা ও মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে ডিমলাইট জ্বালিয়ে টেবিলে বসে পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. নুরুল ইসলাম। পড়াশোনার ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সময় না থাকলেও হলজীবনের ঈদ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।
ঈদের দিন দুপুরে এসএম হলের সামনে গাছের নিচের টেবিলে বসে কয়েকটি শিশুর সঙ্গে গল্প করছেন ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থী। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বললেন, ‘ক্যামনে বাড়িতে যাই! মুখ দেখাবো কী করে? পড়াশোনা শেষ করেছি তিন বছর হয়ে গেছে। এখনও চাকরি পাচ্ছি না। বাড়িতে গেলে সবাই জানতে চায় কী করি? মা-বাবার মনটাও তাই বিষণ্ন। কারও মুখে এখনও হাসি ফোটাতে পারিনি।’
/জেএইচ/আপ-এআর/