শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যদের নিয়ে বসবে ইউজিসি

ইউজিসিদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা রোধে দু’বছর আগেই অভিন্ন নীতিমালা করে দিয়েছে সরকার। এই অভিন্ন নীতিমালা কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় মেনে চললেও মানছে না অনেকগুলোই। আর এই নীতিমালার বাস্তবায়নের জন্য দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বসবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ইউজিসি’র অডিটোরিয়ামে এক সভা অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাওয়া এক গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়,শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়,এতে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়। তাই মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিতে এবং নিয়োগের পূর্বে পুলিশ ভেরিফিকেশন বা গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করার পরামর্শও দেওয়া হয়।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইউজিসি ওই বছরের এপ্রিল মাসে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের পূর্বে কোনও পুলিশ ভেরিফিকেশন বা গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ব্যক্তিগত তথ্যাদি যাচাই হয় না। ফলে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তি বা অপরাধীরা নিয়োগের সুযোগ পায়। শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়, এতে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে অনিয়মের সুযোগ হ্রাস পাবে। এছাড়া দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও পুল গঠন করা,মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পেশায় আকৃষ্ট করতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি আকর্ষণীয় বেতন কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় স্বায়ত্তশাসনের ধারণা সমুন্নত রেখে ১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার বাঞ্ছনীয়।

পরে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগের সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চারটি ধাপ মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা, ডেমো ক্লাস নেওয়া এবং চাকরি চূড়ান্তের আগে প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন। তবে ওই  সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা ও উপাচার্যরা কেউ কেউ এ নির্দেশনা মানতে বাধ্য নন বলে জানিয়েছিলেন কমিশন ও মন্ত্রণালয়কে।

এদিকে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দেওয়া ওই নির্দেশনা ইতোমধ্যে কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় মেনে চলা শুরু করেছে। তবে কেউ কেউ এ নিয়মের ধারে কাছেও যাচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগে আগের মতোই তাদের স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য এবং এর অংশীজনদেরকে নিয়ে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এক কর্মশালার আয়োজন করছে কমিশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম রোধের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনার পর একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেই নীতিমালা এখনও অনেকেই মানছে না। আর এ বিষয়েই আগামী ১২ সেপ্টেম্বর কমিশনের কনফারেন্স কক্ষে সব উপাচার্যকে নিয়ে একটি কর্মশালা করা হবে। কিভাবে এই অভিন্ন নীতিমালা মেনে চলা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।’