‘অনাবশ্যক মামলার’ ক্ষমতা হারাচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষকরা

দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও স্থগিত, কর্তন ও বাতিল করলেই উচ্চ আদালতে মামলা করেন সংশ্লিষ্টরা। আর তদবির না থাকায় সেসব মামলায় হেরে যায় সরকারপক্ষ। এই পরিস্থিতি এড়াতে শিক্ষা আইনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সরকারি অংশ স্থগিত, কর্তন ও এমপিও বাতিলে সুনির্দিষ্ট বিধান যুক্ত করা হয়েছে।  বিধান অনুযায়ী অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে আর আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না সংশ্লিষ্টদের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত, কর্তন ও বাতিল সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা বিধিমালা না থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা রয়েছে।  ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে জন্য শিক্ষা আইনের খসড়ায় বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন:
বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার এখতিয়ার পাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে কওমি মাদ্রাসা

ছুটি চলাকালে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে বসিয়ে রাখার বাধ্য-বাধকতা নেই

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা আইন-২০২১ খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আইন প্রণয়নের পর গেজেট আকারে তা প্রকাশ হলেই নীতিমালা বা বিধিমালা ছাড়াই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশ কর্তন, স্থগিত ও এমপিও বাতিল করার ক্ষমতা কার্যকর হবে।

 

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা ডিসিপ্লিন আনার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনে কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করা নেই। সেই বিষয়গুলোকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে আইনের খসড়ায়। সুনির্দিষ্ট কাঠামো ছাড়া কিছু কাজ করছি। পরে আদালতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়। সে কারণে আমরা সমস্যায় পড়ি। সেজন্যই কাঠামো দরকার। এরকম অনেক বিষয় শিক্ষা আইনের খসড়ায় বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।  যাতে রেগুলেটরি বডিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করতে পারবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ’

 

ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে আদায় করা অর্থ বা কোনও অনুদান বা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো অর্থ প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা না রাখলে, সরকার নির্ধারিত বিধিবিধান অনুযায়ী হিসাব সংরক্ষণ না করা হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অভিযুক্ত শিক্ষকের বেতনের সরকারি কর্তন, স্থগিত ও এমপিও বাতিল করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে আইনের খসড়ায়।

 

শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি, শাখা খোলা অথবা পাবলিক পরীক্ষায় অসদুপায়ে সহায়তা দেওয়া অথবা আর্বিট্রেশন ইত্যাদি সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রতিপালন করা করলে এই শাস্তি পেতে হবে।  বেতন-ভাতার সরকারি অংশভুক্তির জন্য অসত্য সত্য বা জাল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ কিংবা জাল নিবন্ধন সনদ প্রদান, অসত্য তথ্য বা জাল নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য দিলে এমপিও স্থগিত কর্তন বা বাতিল করা হবে।

 

কোনও শিক্ষক শারীরিক ও মানসিকভাবে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে, শিক্ষক হিসেবে অযোগ্য প্রমাণ হলে অথবা যোগ্যতাসূচক কোনও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে তিনবার ব্যর্থ হলে তার এমপিও কর্তন স্থগিত বা বাতিল করা হবে।

 

নারী ও শিক্ষা নির্যাতন এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণ হলে, নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনে পাঠদান করালে, সরকারি নির্ধারিত হরের চেয়ে অতিরিক্ত হারে বেতন-ভাতা অথবা ফি নেওয়া হলে এবং পাবলিক পরীক্ষায় পর পর দুবার ফলাফল অসন্তোষজনক হলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের এমপিও স্থগিত, কর্তন ও বাতিল হবে।

 

পরীক্ষণ, নিরীক্ষা ও তদন্ত কাজে বাধা দিলে, অসহযোগিতা করলে, পরীক্ষণ ও নিরীক্ষা অথবা তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ করলে, মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করলে মাত্রা অনুযায়ী এসব ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

 

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও প্রশাসনিক বিষয়গুলো সরকার প্রণীত বিধিমালা, নির্দেশিকা বা নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হবে।  বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ স্থগিত, কর্তন, বাতিল এবং পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

 

শিক্ষা আইনের বিধানে উল্লিখিত ধারা বা আইন অনুসারে তৈরি বিধিমালা বা নীতিমালা অনুসারে নেওয়া সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে আইনের মাধ্যমে।