প্রাথমিকে ‘শিখন ঘাটতি’ পূরণের ব্যবস্থা রেখে পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন

প্রায় দেড় বছর পর আগামীকাল রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। দীর্ঘ এই সময়ে অনলাইন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রাখা হলেও শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যে বেশ ঘাটতি পড়েছে একথা স্বীকার করতেই হবে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের এই ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা রেখেই ২০২১ সালের ‘বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বলছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হলে পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে।

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা এবং এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘সকল নির্দেশনা রুটিন ও নির্দেশিকা বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ’

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পরিকল্পনাটি একই সঙ্গে ২০২১ সালের বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা ও গত বছরের শিখন ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা। তাই শিক্ষকরা এই পরিকল্পনা অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ করে এই বছরের নির্ধারিত শিখন অর্জন সম্ভব হবে। এই পরিকল্পনায় আগের শ্রেণির শিখন ঘাটতি মেটাতে ক্লাসের শুরুতে বা নির্দিষ্ট কোনও সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট বা শিক্ষককের বিবেচনা মতো সময় নিয়ে আগের শ্রেণির সংশ্লিষ্ঠ পাঠ নিয়ে আলোচনা করবেন। 

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমের রুটিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়।

পাঠ পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য


১) এই পরিকল্পনার শুরুতে কিছুদিন শিক্ষার্থীদের মনো-সামাজিক সহায়তা প্রদানের জন্য রাখা হয়েছে এবং একটি নির্দেশিকা এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

২) রিকভারি পরিকল্পনা ছকে কিছু সেলে সেড দিয়ে আগের শ্রেণির নির্দিষ্ট পাঠ বা সারাংশ বা অনুশীলনগুলো সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

৩) এই পরিকল্পনাটি একইসঙ্গে ২০২১ সালের বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা ও গত বছরের শিখন ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা।

৪) শিক্ষক সংস্করণ (টিজি) এর সঙ্গে মিল রেখে শ্রেণি পাঠ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক সংস্করণের নির্ধারিত শ্রেণি পাঠ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।

৫) পূর্ববর্তী শ্রেণির যেসকল পাঠ বিষয়বস্তুসহ সরাসরি সংযুক্ত করা প্রয়োজন সেগুলোর সম্পূর্ণ পাঠ বর্তমান শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে যেসব পাঠের মধ্যে বিশেষভাবে ভাষার কাজ (যুক্তবর্ণ, যতিচিহ্ন, সহজ ব্যাকরণ) রয়েছে সেসকল পঠের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাঠ বা বিষয়বস্তু পুনরাবৃত্তি না করে বরং সুনির্দিষ্ট অংশ বা অনুশীলনকেই শুধু বর্তমান শ্রেণির পাঠের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।     

ব্যবহার নির্দেশিকা
১) এই পরিকল্পনায় প্রথম দিন হিসেবে যে তারিখই থাকুক না কেনও বিদ্যালয় খোলার তারিখ থেকে প্রথম দিন গণ্য করা হবে।

২) শিক্ষক সংস্করণে নির্ধারিত পাঠ উপস্থাপন পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষকরা শ্রেণিতে পাঠ উপস্থাপন করবেন।

৩) কোনও নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর জন্য এই পরিকল্পনায় নির্ধারিত শ্রেণিপাঠ সংখ্যা অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় পূর্ববর্তী শ্রেণির সংযুক্ত পাঠটি বাদ যাবে।

৫) শিক্ষকরা এই পরিকল্পটি অনুসরণ করে বর্তমান শ্রেণির সারা বছরের শ্রেণি পাঠ পরিচালনা করবেন।

৬) শিক্ষার্থীদের কাছে যেহেতু পূর্বের পাঠ নেই, তাই শিক্ষককে শ্রেণিতে প্রবেশের আগেই প্রয়োজনীয় বই ও উপকরণ প্রস্তুত বা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হবে।

৭) প্রথম সমায়িক বা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হলে, পরিকল্পনায় পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখগুলোয় ধারাবাহিকভাবে শ্রেণি পাঠদান চলমান থাকবে এবং পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত যে সকল বিষয়বস্তু পাঠদান সম্পন্ন হবে সেই সকল বিষয়বস্তুর ওপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

৮) রিকভারি পরিকল্পনা ছকে সেড দিয়ে পুর্ববর্তী শ্রেণির নির্দষ্ট পাঠ বা পাঠের অংশ বা অনুশীলনগুলো সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সেড দেওয়া ঘরের সংযুক্ত পুর্ববর্তী পাঠ বা সারাংশ বা অনুশীলনগুলো নির্দিষ্ট ক্লাসের প্রথম ১৫ থেকে ২০ মিনিট বা শিক্ষককের বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সময়ে পাঠ দিয়ে বাকি সময়ে বর্তমান শ্রেণির পাঠ উপস্থাপন করবেন।