হেলে পড়া বিদ্যালয় ‘সোজা’ করার চেষ্টা

ছয় মাস আগে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নির্মাণাধীন পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন একপাশে হেলে পড়ে। এ ঘটনার পর ‘অভিনব’ পদ্ধতিতে ভবনটি সোজা করার চেষ্টা চালাচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। তবে কী পদ্ধতিতে ভবন সোজা করার চেষ্টা চলছে, তা স্পষ্ট করছেন না সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ভবনটি হেলে পড়া ও সোজা করার ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না। আমি এখনই দেখছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) বাস্তবায়নাধীন ‘নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজে দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে।

নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই ভবনটি ৫-৬ ইঞ্চি হেলে পড়ে। বিষয়টি নজরে এলে কাজ বন্ধ রাখা হয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইইডি’র তিন সদস্যবিশিষ্ট টেকনিক্যাল টিম ভবনটি পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে। পরে ভবন হেলে পড়া ঠেকানো ও সোজা করতে এ পদ্ধতিতে কাজ করতে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে পাশ হেলে গেছে তার বিপরীত পাশে আনুমানিক ১৪ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি খনন করা হচ্ছে। অন্য পাশে বাঁশের পাইলিং দিয়ে ১২ ফুট চওড়া ও ১৪ ফুট উঁচু বাঁধের মতো করে নির্মাণ করা হচ্ছে। আর এই পদ্ধতিতে কাজ চলছে প্রধান প্রকৌশলী শাহ নাইমুল কাদেরের নির্দেশে। তবে ভবন রক্ষায় এই পদ্ধতি কার্যকর কিনা তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

অভিযোগ রয়েছে, ভবনটি যেখানে করার কথা ছিল সেখানে নির্মাণ না করে কিছুটা সরিয়ে নির্মাণ শুরু হয়। যেখানে ভবন নির্মাণ চলছে সেখানকার সয়েল টেস্ট ঠিকভাবে করা হয়নি। এছাড়া জায়গাটি বিল বা ডোবা হিসেবে থাকলেও বহুতল ভবন নির্মাণের আগে তার স্থায়িত্ব নিয়েও ভাবা হয়নি। এসব কারণে ভবনটি হেলে পড়ে। 

এই কাজে সংযুক্ত ইইডির খুলনা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন।’

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দিনভর চেষ্টা করেও প্রধান প্রকৌশলী শাহ নাইমুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একাধিকবার তার সেলফোনে কল করলেও তিনি রিসিভি করেননি। মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

গণপূর্ত বিভাগের এক নির্বাহী প্রকৌশলী (পুরকৌশল) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চার থেকে ছয় ইঞ্চি হেলে গেলে বিম-কলাম ক্র্যাক করবেই। কোথাও না কোথাও ক্র্যাক করার কথা। যদি তা করে তাহলে সোজা করেও কোনও লাভ হবে না। এই ত্রুটি দূর করাও কঠিন। সয়েল ঠিক না থাকলে সোজা করেও লাভ হবে না। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেখা যেতে পারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঠিক করা যায় কিনা। সাধারণভাবে এসব ভবন ঠিক করে স্থায়িত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়।’

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যদি ভবনটি হেলে গিয়ে বিম-কলাম ক্র্যাক করে তবে আর ঠিক হবে না। মাটির কারণে যদি ভবন হেলে যায় তবে মাটি ডেভেলপ করতে হবে। তবে ভবন ঠিক করা সম্ভব কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই বলতে হবে।’