সেই কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে

ঢাকার সাভারের হাজী ইউনুছ আলী কলেজের এক ছাত্রের নৃশংস আঘাতে প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারে মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। রবিবার (১৭ জুলাই) এ তথ্য জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর গত ১৪ জুলাই প্রতিবেদনসহ চিঠি পাঠায় অধিদফতর।

ওই চিঠিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, কলেজটির মাধ্যমিক স্তরের অনুমোদন নেই। পরিচালনা কমিটির মেয়াদও নেই। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ গঠনের প্রস্তাব স্থগিত রেখে কলেজকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ মে কলেজের ছাত্র আশরাফুল ইসলাম (জিতু) নৃশংসভাবে আঘাত করায় উৎপল কুমার সরকার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। কলেজটির বিদ্যালয় শাখার পঞ্চম শ্রেণি বনাম অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে ক্রিকেট খেলা চলছিল। উৎপল কুমার সরকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের কোচের দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি স্কুল ভবনের বিপরীত পাশে বসে খেলা দেখছিলেন। খেলায় আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রভাষক শরিফুল ইসলাম। বেলা ১টা ১০ মিনিটের দিকে হঠাৎ একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম ওরফে জিতু কলেজের প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে বারবার মাথায় ও বুকে আঘাত করতে থাকে। ঘটনাটি দেখামাত্র আম্পায়ার শরিফুল ইসলাম দৌড়ে গিয়ে জিতুকে ধরে ফেলেন। কিন্তু তার আগেই জিতু উৎপল কুমার সরকারের মাথা ও বুকে কয়েকটি আঘাত করে ফেলে। উৎপল কুমার সরকারের অবস্থা খারাপ হতে থাকায় জিতুকে ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য শিক্ষকের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান শরিফুল ইসলাম। এনাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উৎপল সরকার গত ২৭ মে ভোর ৫টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজী ইউনুছ আলী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ শ্রেণিতে পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি এবং ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে প্রথম স্থায়ী স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রথম স্বীকৃতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চালু আছে এবং ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে মাধ্যমিক স্তরের (৬ষ্ঠ-দশম শ্রেণি) কোনও অনুমতি বা স্বীকৃতি নেই।

মাধ্যমিক স্তরের অনুমতি বা স্বীকৃতি না থাকায় প্রতিষ্ঠানের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করা হয় সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর দেওয়ান ইদ্রিস আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তবে এ বছর ধামরাইয়ের আমছিমোড় সেসিপ মডেল হাই স্কুলের নামে জেএসসি ও এসএসসি শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের জন্য নির্বাহী কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে। নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ২০২১ সালের ১৪ আগস্টের পত্রানুসারে অ্যাডহক কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন।

আশরাফুল ইসলাম (জিতু) ২০২০ সালে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ঢাকার উত্তরার তানজিমুল উম্মাহ আলিম মাদ্রাসায় সে লেখাপড়া করে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি।

আশরাফুল ইসলাম (জিতু) ও তার পিতা মো. উজ্জলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা এখন জেল হাজতে রয়েছে।