‘যৌন হয়রানি রোধে নারী-পুরুষের আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকা উচিত নয়’

‘দেশে কোনও ধরনের আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকা উচিত নয়। যৌন নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করা এবং এ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকরী কৌশল প্রণয়ন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও ইউএন উইমেন যৌথভাবে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। 

রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।

সভায় অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘ইউজিসি ও ইউএন উইমেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। যৌন হয়রানির প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নারী ও পুরুষের লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর করতে হবে। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ এছাড়া তিনি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ‘যৌন হয়রানি অভিযোগ কমিটি’কে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

তিনি আরও বলেন, ‘লৈঙ্গিক বৈষম্য কমাতে নারী-পুরুষের একসাসঙ্গে কাজ করার সংস্কৃতি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।’

দেশে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিরোধিতা করে ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘দেশে কোনও ধরনের আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত নয়। যৌন নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করা এবং এ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’

ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত লৈঙ্গিক বৈষম্যের বিষয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে না, ততদিন পর্যন্ত শুধু আইন দিয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করা কঠিন হবে।’

সভায় গর্ভমেন্ট অব কানাডার ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার ফারজানা সুলতানা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএন উইমেন-এর ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেনন্টেটিভ দিয়া নন্দা।

সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত গবেষণা, প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর কৌশল তুলে ধরেন ইউএন উইমেনের নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও মনিটরিং অ্যানালিস্ট শ্রবণা দত্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা তুলে ধরেন ব্লাস্টের সহকারী পরিচালক তাপসি রাবেয়া। এছাড়া, ইউজিসি প্রণীত যৌন হয়রানি সংক্রান্ত তথ্যের ওপর অর্ধ-বার্ষিকী প্রতিবেদন তৈরির জন্য মনিটরিং টুলের ওপর আলোচনা করেন ইউজিসি’র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক ও কমিশনের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ অভিযোগ কমিটির সদস্য সচিব মৌলি আজাদ।

মতবিনিময় সভায় ইউজিসি, ইউএন উইমেন-এর কর্মকর্তা ও ১৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।