শাখা ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা হারাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শাখা ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকছে না বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল ক্যাম্পাসের হাতে। নিজস্ব ক্ষমতা নিয়েই চলবে মূল প্রতিষ্ঠানের শাখা-ক্যাম্পাস। একই সঙ্গে অনুমোদিত মূল ক্যাম্পাস ছাড়া কোথাও কোনও শাখা স্থাপন করতে পারবে না প্রতিষ্ঠান। অনুমোদনহীন শাখা ক্যাম্পাসও পরিচালনা করা যাবে না। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন নীতিমালায় এসব বিধিবিধান যুক্ত করা হয়েছে।

‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি-২০২২ নীতিমালা’ গত ৩০ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগ চূড়ান্ত করেছে। এদিন চূড়ান্ত নীতিমালায় সই করেছেন সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক।

নীতিমালা চূড়ান্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে আবু বকর ছিদ্দীক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করছেন অনেকে। সেসব প্রতিষ্ঠান কতটুকু কোয়ালিটি মেনটেইন করে, উপযুক্ত কি না, সেসব বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড ভালোভাবে দেখতে পারবে। ঢাকা থেকে এটা ভালোভাবে দেখতে পারি না। সে কারণে আমরা এটা করেছি। সব মানুষ কেন ঢাকায় আসবে, এটা হয় না।’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতিতে স্বচ্ছতা আনতে নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সরাসরি শিক্ষা বোর্ড সব স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি দেবে। দুটি মঞ্জুরি কমিটি করা হয়েছে। ১০ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি অনুমোদনের সুপারিশ করবে।’

‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি-২০২২ নীতিমালা’র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখা বিষয়ে ১০ নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার অনুমোদিত মূল ক্যাম্পাস ব্যতীত অন্য কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখা স্থাপন করতে পারবে না। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃথক ক্যাম্পাস/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখা অনুমোদিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্যাম্পাস/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখাকে স্বতন্ত্র ইআইআইএন (এডুকেশন ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) গ্রহণ করতে হবে; প্রতিটি ক্যাম্পাস অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখার সঙ্গে ক্যাম্পাসের স্থান উল্লেখ করতে হবে, প্রতিটি ক্যাম্পাস অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখার জন্য পৃথক জনবলকাঠামো এবং পৃথক ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রাজধানীর নামিদামি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। মূল ক্যাম্পাস-কেন্দ্রিক একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি দিয়ে শাখা পরিচালনা করা হয়। কমিটি ইচ্ছামাফিক পরিচালনা করে অনুমোদিত ক্যাম্পাসগুলো। বিধিবিধান না মেনে শাখা ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ করা হয়।

অনেক সময় শাখা ক্যাম্পাস প্রধানের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। যাকে যখন খুশি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বদলি করা হয়। এতে আর্থিক সংশ্লেষের অভিযোগ ওঠে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি নিরসনে নতুন নীতিমালা ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।