জাতীয়করণে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে হয় না: শিক্ষামন্ত্রী

দেশের এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করেন না শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।  তবে ‘যেসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বেড়েছে কিনা তা যাচাই করে জাতীয়করণে সিদ্ধান্তে যাওয়া উচিত’ বলে মনে করেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা তুলে ধরেন। ব্র্যাক, ইউনেস্কোসহ ৯টি প্রতিষ্ঠান এ প্রতিবেদন তৈরিতে যুক্ত ছিল।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের বিশ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের আর্থিক সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সরকারি এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।  বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রাইভেটলি স্থাপন করা এবং ম্যানেজ করা হয়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের স্টাইফেন ও বই- এর কিছুই সরকার দিয়ে থাকে।  ছাত্রদের বেতন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পায়। ’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রসঙ্গ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান নয় সেসব প্রতিষ্ঠানে সরকার যে বিনিয়োগ করে, সরকার যদি এগুলোকে জাতীয়করণ করে তাহলে আমাদের বিনিয়োগটা কোথায় দাঁড়াবে, কতটুকু বাড়বে সেটা দেখা দরকার। আমার ধারণা ছাত্রদের কাছ থেকে যেটুকু রিকভারি হয়, সেটুকু যেহেতু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পায়, জাতীয়করণ হলে সেটি সরকারি কোষাগারে আসবে।  আমার মনে হয় না জাতীয়করণে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।  কিছুটা হয়তো বাড়তে পারে, অনেক বাড়বে না। এটি সিদ্ধান্তের বিষয় জাতীয়করণ করবো কিনা? জাতীয়করণ যেগুলো করা হয়েছে, সেগুলোতে শিক্ষার মান কতটা বাড়লো? বাড়লো কিনা এগুলো দেখে নিয়ে তারপর জাতীয়করণের সিদ্ধান্তে যাওয়া উচিৎ।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ভালো প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একজন বলেছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ভালো থাকে। সেখানে ভর্তির জন্য সবাই উদগ্রীব।  আমি আপনাদের ছোট একটি তথ্য দেই। ভর্তি বাণিজ্য, ভর্তি যুদ্ধ, সেগুলো দূর করার জন্য কয়েকটি হাতে গোনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশসেরা মেধাবীদের নিয়ে নেয়। আসলে মেধাবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধার সমন্বয় করা ভলো।  বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯ লাখ ২৫ হাজার ৭৮০ আসনের জন্য আবেদন করেছে দুই লাখ ৭৬ হাজার।  আর সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ৯০৭টি। আবেদন করেছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থী।  হ্যাঁ, ঢাকার কয়েকটি স্কুল জেলা শহরের কোনও প্রধান স্কুল মানে ভালো হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাটা অনেক বেশি। আর প্রাইমারি সুন্দর অবকাঠামো, শিক্ষকরা প্রশিক্ষিত।  তারপরও দেখা যায় সেখানে শিক্ষার্থী না দিয়ে ওই সব স্কুলে দেওয়া হয়, মান যাই হোক। আমার কাছে মনে হয় এর মূল কারণ সামাজিক। এখন সবাই মনে করেন- আমার সন্তান অনেক বড় হবে, অনেক বড় হতে হলে ইংরেজি ভাষা শিখতে হবে, ইংরেজি ভাষা শিখতে হলে ওই স্কুলে দিতে হবে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ প্রতিবেদনের বাংলাদেশ ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের এডুকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মাইগ্রেশন এর পরিচালক সাফি রহমান খান।