পাঠ্যবইয়ে ভর করে সরকার সরানোর অপচেষ্টা চলছে: শিক্ষামন্ত্রী

কোনও ইস্যু না পেয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে সরাতে কেউ কেউ নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ের ওপরে ভর করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘কোনও ইস্যু না পেয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে সরাতে কেউ কেউ নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ের ওপরে ভর করার চেষ্টা করছেন। তাদের নিয়ে করুণা করা যায়। পাঠ্যবই নিয়ে তারা যা বলছেন, তা মিথ্যাচার। সেটি মেনে নেওয়া যায় না। যেগুলো ভুল এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তা সংশোধন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। বাকি বইগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত আছে। সবাই মতামত দেন। যেসব মতামত যৌক্তিক তা গ্রহণ করা হবে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবার কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং আমি আনন্দিত এই জন্য যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পাশাপাশি দেশের সব মানুষ পাঠ্যবই পড়ছেন। আমি চাই এটি তারা আরও সূক্ষ্মভাবে দেখুন। যত গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ রয়েছে আমাদের দিক, আমরা খোলা মনে সব পরামর্শ বিবেচনা করবো। যেখানে যৌক্তিক হবে, সেখানে পরিমার্জন, পরিশোধন, পরিশীলন করা হবে। এটি আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি।’

দীপু মনি বলেন, ‘কেউ কেউ বই না পড়ে, না দেখে কেউ একজন বলেছে—তা শুনে অপরাজনৈতিক হিংসা, বিদ্বেষ নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছেন। তারা চায় যে এ সরকার না থাকুক। স্মার্ট বাংলাদেশ কী দরকার।  তারা চায় পাকিস্তান। এরকম একটি গোষ্ঠী বলছে, নতুন বইয়ে ইসলাম নেই, যা আছে ওটা ইসলামবিরোধী। আপনার আশপাশে ও এনসিটিবির  ওয়েবসাইটে বই আছে, আপনি দেখে নিন। চিলে কান নিয়ে গেছে আপনি তার পিছে না ছুটে নিজে দেখুন।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের এবারের বইগুলো শিক্ষক, অভিভাবক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিয়ে করা হয়েছে। আমরা তো মানুষ। আমাদের ভুল হতে পারে। ৩৫ কোটি বই ছাপা হয়, এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। গত বছর বিদ্যুতের সমস্যা ও কাগজের সংকট ছিল। প্রকাশকদের নিয়েও নানান ধরনের সমস্যা সমাধান করতে হয়েছে। যেখানে ভুল থাকবে, যেখানে ধরা পড়বে—আমরা তার সব যৌক্তিক ভুল সংশোধন করবো। কিন্তু যারা মিথ্যাচার করছেন, তা মেনে নেওয়া হবে না। পশ্চিমবঙ্গের বাতিল করা একটি বইয়ের বর্ণপরিচয় থাকা একটি পৃষ্ঠার সঙ্গে আমার ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে যে আমি পৌত্তলিকতা শিখাচ্ছি। সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জীবনের হুমকি দেওয়া হলে, সেটি সামাজিকতা নয়। যেসব শিক্ষক সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে দিনের পর দিন কষ্ট করে বইগুলো সম্পাদনা করেন, তাদের যদি হুমকি দেওয়া হয়, তাদের আমি কী বলবো।’

কোনও  মিথ্যাচার ও অপপ্রচার সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যা যৌক্তিক, সঠিক আমরা তা নিশ্চয় গ্রহণ করবো।’

নবম-দশম শ্রেণির বই নিয়ে বিতর্ক তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এটি গত ১০ বছর পরে ধরা পড়ছে। এটি দেশের একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ সংশোধন করেছেন। তিন দফায় সেটি সংশোধন করা হলেও সেই ভুল রয়ে গেছে। সেটি এবার সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। ’

সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচার করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।