আইডিয়ালে ভর্তি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ

ইনডেক্সবিহীন সহকারী প্রধান শিক্ষক গভর্নিং বডির সদস্য

রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পদটি এমপিওভুক্ত পদ হলেও সৃষ্ট পদ দেখিয়ে নন-এমপিও কনিষ্ঠ সহকারী শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে রোকনুজ্জামান শেখ ভর্তি-বাণিজ্য ও নিয়োগ-বাণিজ্যসহ আর্থিক দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

বুধবার (২১ জুন) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরে অভিভাবকদের পক্ষে এমন অভিযোগ করেছেন মতিঝিলের হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রোকনুজ্জামান শেখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সৃষ্ট পদ দেখানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল না এমপিওভুক্ত শিক্ষক হতে হবে। আইডিয়ালে সহকারী প্রধান শিক্ষক ১২ জন। এমপিও পদ দুটি, আমাকে সৃষ্ট পদ দেখিয়ে নিয়োগ দিয়েছে গভর্নিং বডি। আর গভর্নিং বডির সদস্য করেছেন আগের সভাপতি। এসব ক্ষেত্রে আমার হাত নেই।’

অভিযোগে বলা হয়েছে, মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধ ভর্তি-বাণিজ্য ও নিয়োগ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রোকনুজ্জামান শেখ। অভিভাবক ও শিক্ষকদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বংশধর বলে ভয়ভীতি দেখান। তার কোনও ইনডেক্স নম্বর নেই, অথচ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছেন তিনি। নিজেকে ইনডেক্সধারী শিক্ষক হিসেবে পরিচয়ও দেন।

আরও জানানো হয়, মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে ও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সহকারী প্রধান শিক্ষক হন এবং সর্বকনিষ্ঠ হলেও মতিঝিল দিবা শাখায় তাকে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরও এই শিক্ষক গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি রয়েছেন কীভাবে, তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে লিখিত অভিযোগে।

অধ্যক্ষের দুর্নীতির সহযোগিতাও করেন রোকনুজ্জামান শেখ। গত রমজান মাসে রোকনুজ্জামান নেতৃত্ব দিয়ে গুলশানের একটি ফাইভস্টার হোটেল বসে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উন্নয়নের নামে কোটি টাকা লেনদেন করেন। পরে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভুয়া ভাউচার সংযুক্ত করে হিসাব দেখানো হয়েছে। তিনি সম্মানী বাবদ ৩৮ লাখ টাকা ভুয়া ভাউচার দিয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ ফান্ড থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি উৎসবে গভর্নিং বডির সদস্যরা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্কুল ফান্ড থেকে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন হাবিবুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি।

অভিযোগে বলা হয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশিদী ও অবৈধ সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ সাত লাখ টাকা করে প্রত্যেকের কাছ থেকে নিয়ে নিয়োগ-বাণিজ্যের চেষ্টা করেন। তবে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ওই পরীক্ষা সভাপতি বন্ধ করেছেন বলে অভিযোগে জানানো হয়।

ভর্তি-বাণিজ্য, নিয়োগ-বাণিজ্যসহ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা না। আমি কোনও দুর্নীতি করিনি। শেখ পরিবারের বংশধর বলে পরিচয় দিই না, এটা সমপূর্ণ মিথ্যা কথা।’

রোকনুজ্জামান শেখ আরও বলেন, ‘অধ্যক্ষ, সভাপতির সহযোগী হিসেবে তো কাজ করতে হয়। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশিদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা জানতে চাইলে জাবাব দেবো।