প্রেসে যায়নি নতুন কারিকুলামের চার বই

নতুন কারিকুলামের ২০২৪ শিক্ষা বর্ষের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবই এখনও প্রেসে দেওয়া হয়নি। তবে অন্য সব বই ছাপা হয়ে গেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঠ্যবই নিয়ে নানা গুজব ও অপপ্রচার ঠেকাতে আপাতত প্রেসে দেওয়া হয়নি চার ক্লাসের এই চারটি বই। জাতীয় নির্বাচনের পর বইগুলো ছাপা শেষে করে বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

সোমবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামাজিক বিজ্ঞান বই নিয়ে নানারকম কথা উঠেছে। সে কারণে আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে যথাসময়ে বিদ্যালয়ে পাঠ্যবই আমরা দিতে পারবো।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২৩ সালের ষষ্ট ও সপ্তম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের কনটেন্ট নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। শুধু সমালোচনাই নয়, গুজবও সৃষ্টি করা হয়। বিবর্তনবাদ নিয়ে গুজব সৃষ্টির পর অভিভাবকদের মধ্যে অস্থিরতা দূর করতে বাদ দেওয়া হয় বিবর্তনবাদ সংক্রান্ত কনটেন্ট। যদিও সেই কনটেন্টে কোনও সমস্যা ছিল না। এছাড়া সমালোচনা শুরুর পর নতুন পাঠ্যবইয়ে যেসব ভুল বা অসঙ্গতি ছিল তা ঠিক করা হয়।   

২০২৩ সালে শিক্ষার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। শিখনফল কেন্দ্রিক শিক্ষাক্রম থেকে বেরিয়ে এই বছর থেকে যোগ্যতাভিত্তিক শিখনে নেওয়ায় পরিবর্তিত হচ্ছে শিক্ষাক্রম। পুরো শিক্ষাক্রম তৈরি হয়েছে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জনের একটি শিখন ব্যবস্থা তৈরির জন্য। এতে পাল্টে গেছে গতানুগতিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাও।

২০২৩ সালে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণি ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় শিক্ষাক্রমে সামান্য পরিমার্জন করা হয়। তবে এবার শুধু পরিমার্জন নয়, শিক্ষায় রূপান্তর আনতে পাল্টে ফেলা হয় কারিকুলাম।  

এনসিটিবি জানায়, ২০২২ সালে নতুন কারিকুলামের ষষ্ট শ্রেণির পাঠ্যবই দিয়ে পাইলটিং করা হয়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করা হয় নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন।

নতুন কারিকুলাম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘সংবেদনশীল, জবাবদিহিমূলক একীভূত ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞান যোগ্যতা মূল্যবোধ ও দক্ষতা বাড়াতে জাতীয় শিক্ষাক্রমের মূল ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার খোলনলচে বদলে ফেলা হয়েছে। এখন আর শিক্ষায় পরিবর্তন ও সংস্কারের কথা বলছি না, ট্রান্সফরমেশনের কথা বলছি। শিক্ষার্থীদের কীভাবে শিখতে হয় তা শেখানো হবে। মুখস্থ পরীক্ষা দিয়ে ভালো নম্বর পেয়ে পাস করে আর কাজে লাগাতে পারছে না। সেই শিক্ষা দিয়ে আর চলবে না। সে জন্য নতুন কারিকুলাম করা হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষা হবে আনন্দময়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হবে আনন্দ নিকেতন।’