ছাপা হচ্ছে নতুন কারিকুলামের বই

নতুন কারিকুলামের সব বই প্রেসে পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে কিছু বইয়ের ছাপার কাজ শুরুও হয়েছে। অপরদিকে আগের কারিকুলামের বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফলে নতুন ও পুরোনো কারিকুলামের সব শিক্ষার্থীই নতুন বছরের শুরুতে এসব পাঠ্যবই হাতে পাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, রাজনৈতিক কারণে বিতর্ক এড়াতে নতুন কারিকুলামের অষ্টম ও নবম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বই ছাপা বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে বইগুলো আবারও যাচাই-বাছাই শেষে প্রেসে পাঠানো হয়।

এনসিটিবি জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঠ্যবই নিয়ে নানা গুজব ও অপপ্রচার ঠেকাতে ছাপার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। কারণ, ২০২৩ সালের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের কনটেন্ট নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়। শুধু সমালোচনাই নয়, গুজবও ছড়ানো  হয়। ‘বিবর্তনবাদ’ নিয়ে গুজব সৃষ্টির পর অভিভাবকদের মধ্যে অস্থিরতা দূর করতে বাদ দেওয়া হয় বিবর্তনবাদ সংক্রান্ত কনটেন্ট। যদিও সেই কনটেন্টে কোনও সমস্যা ছিল না। এছাড়া নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার জন্য দেরিতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ বই নিয়ে সমালোচনা ও গুজব সৃষ্টি হয়। এ কারণে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ এবং নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ বই ছাপার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রায় সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অষ্টম শ্রেণির সব বই গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) প্রেসে দেওয়া হয়েছে। আর নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের একটি বই গত শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রেসে দিয়েছি। সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের আরেকটি বই সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রেসে যাবে। নবম শ্রেণির বই ছাপার জন্য টেন্ডার হয়েছে দেরিতে।’

তিনি জানান, বছরের প্রথম দিন হচ্ছে বই উৎসবের দিন, সেদিনই শিক্ষার্থীদের জন্য বই প্রস্তুত থাকবে। যেসব বই পরে ছাপা হবে, সেগুলোও ১০ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যাবে। ফলে বছরের প্রথম দিন বই উৎসবের পর শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেই সবাই যথাসময়ে বই হাতে পাবে।  

এনসিটিবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর বছরের প্রথম দিন বই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি হওয়া সাপেক্ষে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো এবং বই বিতরণের কাজ শেষ করা যাবে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যাতে ভর্তি ও বই বিতরণ কাজ করতে না হয়, সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে যাতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের দিন এবং এর আগে ও পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ সময় ছাড়া বছরের প্রথম দিন থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বই বিতরণ চলবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২৩ সালে শিক্ষার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। শিখন ফলকেন্দ্রিক শিক্ষাক্রম থেকে বেরিয়ে এ বছর থেকে যোগ্যতাভিত্তিক শিখনকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে শিক্ষাক্রম। পুরো শিক্ষাক্রম তৈরি হয়েছে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জনের একটি শিখন ব্যবস্থা তৈরির জন্য। এতে পাল্টে গেছে গতানুগতিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাও।

২০২৩ সালে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণি ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় শিক্ষাক্রমে সামান্য পরিমার্জন করা হয়। তবে এবার শুধু পরিমার্জন নয়, শিক্ষায় রূপান্তর আনতে পাল্টে ফেলা হয় কারিকুলাম।

৩০ কোটির বেশি পাঠ্যবই

এনসিটিবি জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জনকে দেওয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭টি পাঠ্যবই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি পাঠ্যবই। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬টি পাঠ্যবই।

মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭টি পাঠ্যবই। দাখিল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হবে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই।  ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি পাঠ্যবই। কারিগরি ট্রেডের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হবে ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি পাঠ্য বই। এসএসসি ভোকেশনালের ৬ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থীকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৫টি পাঠ্য বই দেওয়া হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের  দেওয়া হবে ৭২৮টি বই। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি শিক্ষক সহায়িকা দেওয়া হবে।