প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে ব্যর্থ হলে টিটি কলেজের অধিভুক্তি বাতিল হবে

দেশের ৯০টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটি কলেজ) সনদের মান সমান নিশ্চিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর বিভ্রান্তি অনেকাংশেই দূর হয়েছে। এবার বেসরকারি ৭৬টি টিটি কলেজে প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যেসব কলেজ তাদের প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে ব্যর্থ হবে তাদের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি টিটি কলেজগুলো প্রশিক্ষার্থী ভর্তিতে প্রতিযোগিতায় নামলেও প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে মনোযোগ দেয় না। তাছাড়া এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের সনদের মান নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ায় ভর্তি বাড়াতে।

প্রশিক্ষণ ছাড়া বিএড সনদ বিক্রির অভিযোগে লাল তালিকাভুক্ত দেশের ২৩টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ দেশব্যাপী গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানোয় ক্ষুব্ধ হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই ঘটনায় সরকারি ১০টি এবং বেসরকারি ৭৬টি টিচার ট্রেনিং কলেজে থেকে অর্জিত মান সমান বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই ঘটনার পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।

এক পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রশিক্ষণগুলোর মানোন্নয়নে মনিটরিং ও প্রশিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ দেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের নিয়ে বসেছি। বেসরকারি বিএড কলেজের শিক্ষকদের একপক্ষের সঙ্গে আরেক পক্ষের যে বিরোধ আছে, আমি অনুরোধ করেছি আপনারা এসব করবেন না। ডিন ও শিক্ষকদের নিয়ে বসে আলোচনা করা হয়েছে যে এ বছরের শুরুর দিকেই প্রশিক্ষকের জন্য একটি ট্রেনিং প্রোগ্রাম করবো। কলেজ টিচাররা ট্রেনিং পেলেও বিএড কলেজের শিক্ষকরা ট্রেনিং পায় না। তাদের জন্য আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি। শুরুতে অধ্যক্ষদের নিয়ে বসবো, তারপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবো। ‘ল’ ও বিএড যেগুলো অবহেলিত, তাদের আমরা আগে শুরু করবো ট্রেইনড করতে। যদি দেখি তারা ঠিকমতো কাজ করছে না, তাহলে তারপর অধিভুক্তি বাতিলের দিকে যাবো। আগে চেষ্টা করবো সবাই মানসম্মত জায়গায় আসুক।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকে এতো বেশি স্বেচ্ছাচারিতা অনিয়ম চলে আসছে নিয়মের মধ্যে বাঁধতে চাইলে প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়। কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আলাদা আলাদা করে পরিদর্শনে গিয়ে দেখবো যাদের মান বিধি অনুযায়ী হবে না, তাদের বন্ধের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

অভিযোগ রয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক সংকট, নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এরমধ্যেই প্র্যাকটিস টিচিং ছাড়া শুধু লিখিত পরীক্ষার নোট সরবরাহ করে লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) সনদ দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত দেশের কিছু বেসরকারি টিচার ট্রেনিং কলেজ।

অন্যদিকে অনুমোদনহীন শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প অফিস চালু করে প্রশিক্ষণার্থী সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির জন্য। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলেও উচ্চ আদালতে মামলা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে রক্ষা পায়।

এছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির প্রতিযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার করে থাকে এক শ্রেণির প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং প্রশিক্ষণের মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।