নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীর বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিমার্জিত নির্দেশিকা পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা-২০২৪ পাঠানো হয়। এই বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন টুলস ব্যবহার করেই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
অধিদফতর বলছে, শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সব সময় গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখতে হবে। এই বিষয়গুলো হলো-
১. নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়বস্তুভিত্তিক নয় বরং যোগ্যতাভিত্তিক। এখানে শিক্ষার্থীর শিখনের উদ্দেশ্য হলো কিছু সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন। কাজেই শিক্ষার্থী বিষয়গত জ্ঞান কতটা মনে রাখতে পারছে তা এখন আর মূল্যায়নে মূল বিবেচ্য নয়, বরং যোগ্যতার সবকয়টি উপাদান জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে তার পারদর্শিতা বিবেচনা করে শ্রেণিভিত্তিক নির্ধারিত যোগ্যতাগুলো কোন কোন মাত্রায় অর্জন করতে পারছে তার মূল্যায়ন করা হবে।
২. শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক। অর্থাৎ শিক্ষার্থী বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। আর এই অভিজ্ঞতা চলাকালে শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাজ এবং আচরণ পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন চালিয়ে যাবেন। প্রতিটি অভিজ্ঞতা শেষে পারদর্শিতার নির্দেশক অনুযায়ী শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের মাত্রা রেকর্ড করবেন।
৩. নম্বরভিত্তিক ফলাফলের পরিবর্তে এই মূল্যায়নের ফলাফল হিসেবে শিক্ষার্থীর অর্জিত যোগ্যতার (জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ) বর্ণনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে।
৪. শিক্ষক সহায়িকা অনুযায়ী একটি অভিজ্ঞতা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের যে সকল কাজের নির্দেশনা দেওয়া আছে শুধু ওই কাজগুলোকেই মূল্যায়নের জন্য বিবেচনা করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনার বাইরে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত কাজ করানো যাবে না।
৫. অভিজ্ঞতা পরিচালনার সময় যেখানে শিক্ষা উপকরণের প্রয়োজন হয়, শিক্ষক নিশ্চিত করবেন যেন উপকরণ গুলো বিনামূল্যের, স্বল্পমূল্যের এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য (রিসাইকেল) উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। প্রয়োজনে বিদ্যালয় এইসব শিক্ষা উপকরণের ব্যয় বহন করবে।
৬. মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিখনকালীন ও সামষ্টিক এই দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে।
শিখনকালীন ও সাময়িক মূল্যায়ন পরিচালনায় শিক্ষকদের করণীয়
শিক্ষার্থীরা কোনও শিখন যোগ্যতা অর্জনের পথে কতটা অগ্রসর হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে প্রতিটি একক যোগ্যতার জন্য এক বা একাধিক পারদর্শিতার নির্দেশক (পিআই) নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি পারদর্শিতার নির্দেশকের আবার তিনটি মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষক মূল্যায়ন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার ভিত্তিতে এই নির্দেশকে তার অর্জিত মাত্রা নির্ধারণ করবেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের যোগ্যতাগুলোর পারদর্শিতার নির্দেশকগুলোর মাত্রা দেওয়া আছে। প্রতিটি পারদর্শিতার নির্দেশকের মাত্রাকে মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহের সুবিধার্থে চতুর্ভুজ, বৃত্ত, বা ত্রিভুজ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিখনকালীন ও সামষ্টিক উভয় ক্ষেত্রেই পারদর্শিতার নির্দেশকে অর্জিত মাত্রার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের মাত্রা নির্ধারিত হবে।
শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশ হিসেবে প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতা শেষে শিক্ষক ওই অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পারদর্শিতার নির্দেশকগুলোয় শিক্ষার্থীর অর্জিত মাত্রা নিরূপণ করবেন ও রেকর্ড করবেন। এছাড়া প্রতি শিক্ষাবর্ষে একটি ষান্মাসিক এবং আরেকটি বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত কিছু কাজ (অ্যাসাইনমেন্ট, প্রকল্প ইত্যাদি) সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া চলাকালে এবং প্রক্রিয়া শেষে একইভাবে পারদর্শিতার নির্দেশকগুলোয় শিক্ষার্থীর অর্জিত মাত্রা নির্ধারণ করা হবে।
প্রথম ছয় মাসের শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীর ষান্মাসিক অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি হবে। ষান্মাসিক মূল্যায়নের রেকর্ড, পরবর্তী ৬ মাসের শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের রেকর্ডের সমন্বয়ে পরবর্তী সময়ে বাৎসরিক অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুত করা হবে।