পরিমার্জিত ৪৪১টি পাঠ্যবই আপলোড হচ্ছে অনলাইনে

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের বিনামূল্যের মূল পাঠ্যবইগুলোর মধ্যে ৬৯১টি বই নতুন করে পরিমার্জন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪১টি বইয়ের পরিমার্জন সম্পন্ন করে পিডিএফ ভার্সনে রূপান্তর করা সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এই পিডিএফ ফাইলগুলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। অন্যদিকে, চলতি বছরের সব পাঠ্যবই আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে এনসিটিবি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০২৩ সালে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। পরে চলতি ২০২৪ সালে প্রাথমিকের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসে। এই শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি পাঠদানের কথা ছিল। তবে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর থেকেই এ নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আলোচিত-সমালোচিত এই পাঠ্যক্রমই স্থগিত করে দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফিরে যাওয়া হয় পুরনো কারিকুলামেই। তবে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

তবে নানান সংকট কাটিয়ে বছরের প্রথম ২০ দিনের মধ্যেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ কোটি এবং মাধ‍্যমিকের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩০ কোটি বই বিতরণ করবে সরকার। বছরের শুরুতেই প্রাথমিকের বইগুলো বিতরণে প্রস্তুতি নেওয়া হলেও মাধ্যমিকের সব বই হয়তো দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি ও গণিত; এ তিন বিষয়ে ৫ কোটি বই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এ রিয়াজুল হাসান জানান, বছরের প্রথম দিনই (১ জানুয়ারি) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিরও বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই আংশিক দেওয়া হবে। এগুলো এমনভাবে বিতরণ করা হবে, যাতে করে প্রত্যেক উপজেলায় কিছু না কিছু নতুন বই যায়।

একইসঙ্গে দশম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের মিলিয়ে ১ কোটি ১০ হাজার নতুন বই প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এগুলোও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাকি বই এবং দশম শ্রেণির বাকি বই ৫ জানুয়ারির মধ্যে তাদের হাতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। আর ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের আরও পাঁচটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি সব বই বিতরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।‘

পাঠ্যবইয়ে অতিরঞ্জিত ইতিহাস-সহ বিভিন্ন পরিমার্জন আনা হচ্ছে এবারের শিক্ষাবর্ষে। কয়েকটি গল্প-কবিতা বাদ দিয়ে নতুন করে গল্প-কবিতা সংযোজন করা হচ্ছে। আর ইতিহাসনির্ভর বিষয়বস্তুতেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এরইমধ্যে ৬৯১টি বইয়ের পরিমাজর্ন সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে ৪৪১টি বইয়ের পরিমার্জন সম্পন্ন করে পিডিএফ ভার্সনে রূপান্তর করা সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এগুলো এনসিটিবি’র ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে বলে জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান। কবে নাগাদ অনলাইনে আপলোড করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সোমবারের মধ্যেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। এরপর এটি প্রকাশের জন্য প্রস্তুত হবে।’ শিগগিরই অনলাইনে এসব বই পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

এবারের পাঠ্য মুদ্রণ ত্রুটি ও বইগুলোতে বানান ভুল কমানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে এবার কাগজের মান নিয়ে আপস করা হয়নি। মান নিয়ে আপস করলে হয়তো সাত দিনেই সব বই ছাপিয়ে দেওয়া যেতো। কাগজের মান নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন, বইয়ের কাগজের মান, বাঁধাই, ছাপানোর কালি এগুলো বিষয়ে কোনও আপস নেই। গত ১৫-১৬ বছর ধরে এসব বিষয়ে আপস করে ১ তারিখে উৎসবের কথা বলে নিম্ন মানের বই দেওয়া হতো। যদিও ১ তারিখেই কখনোই সব শ্রেণির সব বই দেওয়া হতো না। মানের ব্যাপারে আপোস করেও সব বই কিন্তু বছরের প্রথম দিনেই দিতে পারেনি। মানের সঙ্গে আপোস করে বই দেওয়ার এই চর্চাটা আমরা বাদ দিতে চাই।’

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি  

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও তাদের মানবণ্টন এরইমধ্যে অনলাইনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানান, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দেবে। তাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও মানবণ্টন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও বিষয়ভিত্তিক মানবণ্টনও এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।