পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া আর মুঠোফোনে ক’দিন ধরে সবার লেখা আর বলার ধরন দেখে কিছু কথা খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল। যদিও আমি আমার পারসোনাল ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলতে ইচ্ছুক নই। তবুও ২য় জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউন-এর বিশেষ সংখ্যায় লিখতে অনুরোধ করায় ভাবলাম এই সুযোগে মনের কথাগুলো সবাইকে জানাই।
ক’দিন ধরে ‘বৃহন্নলা’ নিয়ে খুব লেখালেখি দেখছি। যদি এ পরিমাণ লেখা সিনেমাটা মুক্তির সময় হতো, তো কিছু দর্শক বেশি পেতাম হলে, এখন তেমনটাই মনে হচ্ছে। জানি না, আমার এমন ভাবনা কতটা প্রাসঙ্গিক।
এটা ঠিক ‘বৃহন্নলা’র গল্পের ব্যাপারে পরিচালক (মুরাদ পারভেজ) মুখ খোলা উচিত। যদিও সে ইঁদুরের গর্তে ঢুকেছে। মনে হয়, এটাই তার জন্য বেস্ট রাস্তা, চলমান পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য।
যে দেশে স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে জাতি কনফিউজড। এভারেস্টে প্রথম কে উঠল, সেটা নিয়েও জাতি কনফিউজড। ড্রাগ এডিকটেড কেন ড্রাগবিরোধী কনসার্ট-এ গায়, সেটা নিয়েও কনফিউজড। গানটা যার তার থেকে কেন পারমিশন নেওয়া হলো না, জাতি কনফিউজড। প্রকাশ্যে একজন নায়িকা ও তার মাকে এফডিসির মতো একটি জায়গায় একজন ডিরেক্টর ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা শ্লীলতাহানি ও মারধর কেন করবে, জাতি কনফিউজড। সব বিদেশি সিনেমা চলবে, শুধু ইন্ডিয়ান সিনেমা এদেশে চললে আমাদের সিনেমার ক্ষতি হয়ে যাবে, এ ধরনের বোকামি কথা শুনে জাতি কনফিউজড। সবকিছুতেই আমাদের মধ্যে লট অব কনফিউশন। সেই দেশে ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক সিনেমা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ‘বৃহন্নলা’!
আমি বলব ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমা দেখে যেমনটা মুগ্ধ হই, ‘বৃহন্নলা’ দেখলে সেরকম প্রশান্তি দেয় আমাকে। জাতির আজ সব কলঙ্ক এসে ঠেকেছে যেই সিনেমার ওপর। সেই সিনেমা আমার দেখা বাংলাদেশের পাঁচটা পরিপাটি সিনেমার একটি।
তো ডিরেক্টরকে গর্ত থেকে খুঁজে বের করো। তার কাছ থেকে টাকা ফেরত নাও। যার যত স্বার্থে আঘাত লেগেছিল, তাকে অপমান করে উসুল করো। এটাই বড় সুযোগ। দেশটাকে উদ্ধার করতে হবে না বিশ্বের দরবারে? শুনেছি গ্রাম্য সালিশেও এ রকম হয়। দোষীকে অত্যাচারের সময় গ্রাম্য শক্ররা ২-৪টা ঘা দিয়ে নেয় এই সুযোগে। মজা নেয়, হাততালি দেয়। ‘বৃহন্নলা’ সূত্রে এর নির্মাতা মুরাদ পারভেজের বেলাতেও তাই ঘটছে। এটা অনুভব করছি, তার প্রাক্তন স্ত্রী হিসেবে নয়, ‘বৃহন্নলা’র একজন অংশীদার হিসেবে।
এবার আশা যাক আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে। এই লেখাটা পড়ে আমাকে অনেকেই জ্ঞান দিতে চলে আসবেন, আবারও। যেমনটা আগে অনেকেই দিতে এসেছেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেছেন, মুরাদের বিপদের সময় পাশে থাকলে না। বিপদ দেখে কেটে পড়লে! ভালোই তো লাগতো একসঙ্গে। ছেলের দিকটা একটু দেখ। তোমার ক্যারিয়ারে মুরাদের অবদান অনেক। ইত্যাদি ইত্যাদি কতশত পরামর্শ-অনুযোগ।
এই যে ’ইউ পিপল : হ্যালো’ আমি সোহানা সাবা। পাড়ার ছেলেরা আমাকে কেউ কখনও বলেনি, তুমি দেখতে সুন্দর, অ্যাক্টিং কর। এ কারণে মিডিয়াতে আমি কাজ করতে আসিনি। আমি সেই ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি এই জায়গায় আসার তালিম নিয়ে। নাচ শিখেছি, অভিনয় শিখেছি। আজ আমার মা, পরিবার, কবরী আপু (আমার প্রথম ছবি ‘আয়না’র পরিচালক অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার) আর আমার কলিগদের জন্য আজকের এই অবস্থান। কাকতালীয়ভাবে মুরাদ পারভেজও আমার অসম্ভব প্রিয় কলিগদের একজন। এখনও। আমরা সাত মাস ধরে আলাদা থাকছি। আর এই ‘বৃহন্নলা’ বিপদটা মাত্র দুই মাসের। তো এই দুইটা বিষয় পুরো আলাদা ঘটনা। যদিও প্রায় সবাই দুটো বিষয়কে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেন। দুটো বিষয় নিয়ে সবাই কনফিউজড।
আমার মনে হচ্ছিল, সেই ‘ছোটবেলায়’ বিয়েটা করে আমি ঠিকই করেছিলাম। এখন যে বিচ্ছেদটা হলো, সেটাও মনে করি শতভাগ ঠিকই আছে। ছেলেটা আমার। আমি তাকে মানুষের মতো মানুষ করার আপ্রাণ চেষ্টা করব। ওর বাবাও তো থাকলোই। এটা বলার কারণ, আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্যের দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য।
আমি-মুরাদ সংসার জীবনে কতটুকু ভালো ছিলাম সেটা একান্তই আমাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমি তখন থেকে এখনও কারও সঙ্গে আলোচনা করতে একদমই রাজি নই। এসব বিষয়ে আমি কারও চায়ের টেবিলের বিষয়বস্তু হতে চাই না। আমার চলমান জীবনে অন্য কী চলছে, কে ছিল কোনও এক সময়, সামনে কে আসছে, সেসব একান্ত আমার বিষয়।
সবাই আমার পর্দার কাজটা দেখুক। সেসব নিয়ে আমার তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হোক। কাজটা আরও ভালো করা যায় কীভাবে সে নিয়ে আমাকে বলুক। আমি সেসব শুধরে অবশ্যই মন দিয়ে কাজ করতে চাই। সবাই দোয়া করুক, পাশে থাকুক, এটাই চাই। শুধু চাই না আমার ব্যক্তিজীবনে কেউ হস্তক্ষেপ করুক।
এবার বাংলা ট্রিবিউনকে নিয়ে কিছু বলতে হয়। কারণ সত্যিই তারা এর দাবিদার। গেল দুই বছর প্রিয় বাংলা ট্রিবিউনকে সেভাবেই পেয়েছি আমি। আমি দেখিনি এই অনলাইন পোর্টালে স্বচ্ছ সংবাদের বাইরে ‘ইনটেনশনাল’ কোনও সংবাদ পরিবেশন করতে। অন্তত প্রতিষ্ঠানটির বিনোদন বিভাগ সম্পর্কে এ কথাটি আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠেই বলছি। সবার আস্থা নিয়ে এভাবেই থাকুক বাংলা ট্রিবিউন। অনেক শুভেচ্ছা বিটি পরিবারের প্রতি।
/এমএম/