বাংলা ট্রিবিউন: ২ বছর

প্রচারণার ঘর-বারান্দা

গত এক দশকে, খুব নীরবে সবচেয়ে বড় যে বিপ্লবটি ঘটে গেছে, তার নাম তথ্য ও যোগাযোগ। আমরা এখন বেশিরভাগ সময় অনলাইনেই থাকি। কখনও অফিস পিসিতে, কখনও বাসার পিসিতে, কখনও ল্যাপটপে, কখনও ট্যাবে, কখনও স্মার্টফোনে। আমাদের চোখ সর্বদা ব্যস্ত সর্বশেষ আপটেড জানতে। জগৎজোড়া জালের মাধ্যমে আমরা এখন সবসময় সারা পৃথিবীর সঙ্গে সংযুক্ত। আমরা একেকজন যেন জালের একেকটা ছিদ্র অথবা গিট্। অন্তর্জাল থেকে বিচ্যুত হওয়া যেন জালের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়া। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়া।


তথ্য বিনিময় ও যোগাযোগের এই যুগপৎ পরিবর্তন আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বিরাট পরিবর্তন এনেছে। এখন আমরা আর চাইলেও চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। ঝকঝকে ছবি আমাদের আকর্ষণ করছে, চকমকে শিরোনাম আমাদের আকর্ষণ করছে। এক সংবাদে ক্লিক করেই আমরা চোখ রাখছি আরেকটিতে। আমরা যেন খবরের রাজ্যে বাস করি। খবর খাই, খবরেই বাঁচি।

প্রসূন রহমান।এদিকে সকল খবরই স্ক্রল হচ্ছে ফেসবুকের হোমপেজে। যেন খবরের বাজার। এখানে এখন ফেসবুক আর অনলাইন পত্রিকা একে অপরের পরিপূরক। ফেসবুক থেকে যেমন খবর তৈরি হচ্ছে, তেমনি তৈরি হওয়া খবর এসে পরিবেশিত ও বিস্তৃত হচ্ছে ফেসবুকে। যারা খবর তৈরি করছেন, তারাও ফেসুবকে খবর শেয়ার করে পাঠককে লিংকের সূত্র ধরে নিয়ে যাচ্ছেন ওয়েব পোর্টালে। আবার অনেকের ফেসুবকের দেয়ালে লেখা/পোস্ট অথবা স্ট্যাটাস সংবাদ হয়ে চলে যাচ্ছে নিউজ পোর্টালে। আবার একইভাবে সেটা নিউজলিংক হয়ে ফিরেও আসছে একই জায়গায়। এখন ফেসবুকের হোমপেজজুড়ে দেশি-বিদেশি প্রায় গোটা পঞ্চাশেক অনলাইন পত্রিকার নিউজলিংক-এর শিরোনাম ওঠা-নামা করে সারাদিন। ঘূর্ণন প্রক্রিয়ায় অনলাইনের নিউজলিংক আর ফেসবুক যেন মিলেমিশে একাকার। কে কাকে প্রচারের সূত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলা মুশকিল।

একটা সময় ছিল যখন পত্রিকার পাতায় লেখা অথবা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে লেখক অথবা প্রেরক অপেক্ষা করতেন কবে প্রকাশিত হবে। কখনও প্রকাশিত হতো, কখনও হতো না। যদি হতো, তবে বিজ্ঞাপন আর মেকাপ, গেট-আপের সঙ্গে সহাবস্থান বজায় রাখতে গিয়ে আপসের শিকার হয়ে যেত লেখার মূল্যবান অংশ। হয়তো এখনও তাই হয়। অনলাইন পোর্টাল, ব্লগ আর ফেসুবকের কল্যাণে লেখক এবং সংবাদ প্রেরক এই অপেক্ষা আর সম্পাদনার কাঁচির হাত থেকে মুক্তি লাভ করেন। যখনকার লেখা তখনি প্রকাশ করে দেয়ার মোক্ষম অস্ত্রটি লেখকের নিজের হাতে চলে আসে। সংবাদ প্রেরক ফেসবুকে ব্যবহার করেন নিজের দেয়াল।

তবে অনলাইন পত্রিকার মূল শক্তিটাও বোধ হয় এখানেই, ‘যখনকার খবর তখনই’। তবে এই ‘যখন-তখন’ কখনও কখনও প্রতিযোগিতার ফেরে পড়ে যাচাই-বাছাইয়ের আগেই প্রকাশিত হয়ে গিয়ে একটু ঝামেলা বাধায় বৈকি! তবে সবকিছুতেই পিঠ চাপড়ানো বা গসিপকে যারা একটু কম গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে বাংলা ট্রিবিউন অন্যতম। ভালো লাগার জায়গাটা এখানেই। তবে অনলাইন পত্রিকার অন্য আর যে বিষয়টাকে বিশেষ গুরুত্ব দিই, সেটি হচ্ছে, যে কোনো সময় ভুল সংশোধন করবার সুযোগটিকে। যে কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় আমার লেখবার সুযোগ হয়, সবখানেই এ সুযোগটি রয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের বেলায়ও এ সুযোগটি বিদ্যমান। তাছাড়া অনলাইন পত্রিকায় সংবাদের অনুকূলে সংশ্লিষ্ট লিংক দেয়ার সুযোগটিও অনলাইন পত্রিকার শক্তিমত্তার আরেকটি দিক। কৌতূহলী পাঠক চাইলেই প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সংবাদগুলোয় অনায়াসে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

পুঁজির আনুকূল্য না পাওয়া সৃজনশীল নির্মাতাদের জন্য অনলাইনই এখন মূল প্রচারণার ক্ষেত্র। অনলাইন পত্রিকাগুলোকেই পাশে পাওয়া যায় সবার আগে। বাজেট-খরায় ভোগা জনপ্রিয় শিল্পমাধ্যমগুলোর প্রচারণার মূল ভরসা এখন অনলাইন নিউজ-এর ঘর এবং তা শেয়ারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার বারান্দা। বাংলা ট্রিবিউন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও স্বাধীন মত-প্রকাশের মুক্ত উঠোন হওয়ার পাশাপশি মেধা ও মননের প্রিয় ঘর হয়ে ছড়িয়ে থাক অন্তর্জালে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে বাংলা ট্রিবিউনের সব কর্মী, পাঠক, সহযোগী ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি শুভ কামনা ও বিনম্র অভিবাদন।

/এম/এমএম/