বাংলা ট্রিবিউন: ২ বছর

মায়ের কাছে ছেলের প্রশ্ন

আমাদের কনিষ্ঠ পুত্র নিনিত হুমায়ূন প্রায়ই তার কিছু সিক্রেট আমার কাছে বলে। সেদিন বলছিল, “মা একটা কথা বলব? সিক্রেট... কাউকে বলতে পারবা না। জানো, সারুক (শাহরুখ) খান না সিনামার কিইইইং... ও শুধু সিনামা করে না। ‘অগি অ্যান্ড দ্য ককরোচ’ কার্টুনে অগির পেছনের ভয়েসটাও সারুক খানের...”

দুই ছেলের সঙ্গে মেহের আফরোজ শাওন। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।আমি : ওমা! তাই নাকি! (বুঝলাম, এসব গল্প তার স্কুলের বন্ধুদের কাছে শোনা)

নিনিত : হুম। টোমার সিনামায় টুমি সারুক খানকে নেও নাই কেন?

পুত্রের প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলাম আমি। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ বানানোর শুরুর দিককার কথা মনে পড়ে গেল।

মাত্র ১৫ মিনিটের সিদ্ধান্তে যখন ‘কৃষ্ণপক্ষ’ বানাব ঠিক করলাম, তখন মুহিব চরিত্রে নায়ক রিয়াজ ছাড়া আর কারও কথাই ভাবতে পারছিলাম না। সবার আগে প্রথম ফোনটা দেয়া হল তাঁকে। দীর্ঘ আট বছর ভালো কাহিনীর অভাবে চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ-এর ‘কৃষ্ণপক্ষ’র কথা শুনে একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। সেই দিন থেকে শুটিংয়ের প্রতিটি মুহূর্ত ছায়ার মতো ছিলেন তিনি ‘কৃষ্ণপক্ষ’র সঙ্গে। এমনকি শুটিংয়ের মাঝে চরম অসুস্থতার সময়ও তাঁর হৃদয়ের একটা অংশ ছিল ‘কৃষ্ণপক্ষ’র সেটে। পুরো ছবিতে মুহিব চরিত্রে রিয়াজ যতবার পর্দায় এসেছেন, ততবার পর্দা হেসে উঠেছে।

দ্বিতীয় যে অসাধারণ মনের মানুষটি ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির সঙ্গে যুক্ত হলো, সে হলো আমার প্রাণের বন্ধু তানিয়া আহমেদ। সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায় এই মানুষটি আগলে রাখে বিষণœ আমাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। তাঁর উত্তরার বাসার একটি রুম বরাদ্দ হয়ে গেল আমার জন্য, যেন বেশি রাতে শুটিং শেষ হলে তাঁর ওখানেই থাকতে পারি। তাঁর শুটিং না থাকলেও দুপুরের খাওয়ার সময় ছোট ছোট ব্যাগভর্তি হয়ে আমার প্রিয় খাবার আসতে থাকল স্পটে। এমনকি শুটিংয়ের সময় যেন আমি সুস্থ থাকতে পারি, সেজন্য তাঁর বাসা থেকে প্রতিদিন বোতলে কমলালেবু ভরা খাবার পানিও  এলো।

আর অভিনয়? ‘কৃষ্ণপক্ষ’  উপন্যাসের জেবাকে বই থেকে তুলে এনে পর্দায় জীবন্ত রূপ দেওয়ার জন্য তানিয়া আহমেদের চেয়ে যোগ্য আর কেউ হতে পারেন বলে আমি মনে করি না। তুখোড় অভিনেতা আজাদ আবুল কালামের সঙ্গে অভিনয়ের চমৎকার যুগলবন্দি দেখিয়েছেন তানিয়া আহমেদ, তাদের দৃশ্যগুলোয় সিনেমা হলের পিনপতন নীরবতাই তার প্রমাণ। 
মাহিয়া মাহি। শুধু হুমায়ূন আহমেদ-এর নাম শুনেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের এক নম্বর আসনে আসীন এই নায়িকা ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির অংশ হয়ে গেল। একবারও জানতে চাইল না তার চরিত্র কি প্রধান নায়িকার নাকি পার্শ্ব চরিত্রের। জানতে চাইল না কত হবে তাঁর পারিশ্রমিক। তাঁর চেহারায় শুধু একটাই প্রশান্তি। তিনি কাজ করবার সুযোগ পেয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের কাহিনীতে। এ কথা বলতে আমার কোনও দ্বিধা নেই যে, মাহির মতো লক্ষ্মী নায়িকা আমি খুব কমই দেখেছি। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রে মাহি নায়িকা থেকে পুরোদস্তুর অভিনেত্রী হয়ে উঠেছেন।

কৃষ্ণপক্ষ’র প্রিমিয়ার শো’তে এভাবেই দেখা মিলেছে নন্দিত হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতি।ছোট্ট ছোট্ট চরিত্রে বাঘাবাঘা সব অভিনেতা যেমন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ফারুক আহমেদ, ঝুনা চৌধুরী, রফিকুল্লাহ সেলিম, স্বাধীন খসরু যে কাজ করেছেন, তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার কোনও সীমা নেই।

 সবশেষে বলতে চাই ফেরদৌস ভাইয়ের কথা। আমার চলচ্চিত্র জীবনের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় তার মতো জেন্টলম্যান (কেন জানি ‘ভদ্রলোক’ বলে শান্তি পাচ্ছিলাম না) আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিতে ফেরদৌস ভাইকেও পেয়েছি।

‘কৃষ্ণপক্ষ’ নিয়ে আমার এই ছোট্ট অনুভূতিটুকুন আমার নিনিত বাবার জন্য লিখে রাখলাম। যেন সে আমাদের সিনেমার সত্যিকারের ‘কিং’দের চিনতে পারে। সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাই দেশের অন্যতম সফল অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউন-এর প্রতি। খুব অল্প বয়সে যে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত আলোকিত করছে আমাদের। বাংলা ট্রিবিউনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ভালোবাসা থাকল এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি।

/এমএম/