বলছি টেলিভিশন নাটকের কুশীলবদের কথা। ওটা করেই যেহেতু অনটনকে সালাম জানিয়ে দূরে রাখি, ওটা নিয়ে অনেক চিন্তা-দুশ্চিন্তা হয় সে কারণেই। কুশীলব বলতে আমি নাটকের সঙ্গে যুক্ত সকলকে বোঝাতে চেয়েছি। যে ছেলেটি সংলাপ ধারণের জন্যে বুম ধরল বা যিনি চ্যানেলের হয়ে নাটকটির বাণিজ্য সম্ভাবনা বিচার করলেন, সবাইকেই একীভূত করেছি ‘কুশীলব’ শব্দের বারান্দায়।
না করে উপায় নেই, সেটা আমরা বুঝে গেছি। কীভাবে বুঝলাম প্রশ্ন করলে ভূরি ভূরি ঘটনা-দৃষ্টান্ত, দুঃখ-ক্ষোভ আপনাদের সমীপে নিবেদন করতে পারব। যেমন ধরুন, সেদিন মামুন ভাই (মামুনুর রশীদ) বলছিলেন তার অভিনয়ের ব্যস্ততা কমে যাচ্ছে। আমি তাকে তখন এ গল্পটা বললাম, একটা অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান আমাকে ফোন করে বললেন, ‘এটা কী করেছেন আপনি!’ জানতে চাইলাম ‘কী করেছি?’ উনি বললেন, ‘এক নাটকে আপনি চারজন বাবা-মা রেখেছেন, ছেলেটার বাবা-মাও জীবিত আবার মেয়েটির বাবা-মাও জীবিত! হলো কিছু? সিনিয়র আর্টিস্ট দুই জনের বেশি হলে বাজেটে কুলাবো কী করে?’ এরপর তার বাজেট ভাবনার ওপর ভর করে চরিত্রের একজনকে মারলাম, একজনকে দেশান্তরিত করলাম। গল্পটার মোরাল নিশ্চয় ‘সিনিয়ার আর্টিস্ট’দের বলতে হবে না।
তার মানে পুরো গোলপোস্টই সরে গেছে। এক অগ্রজ বলছিলেন, ‘টিভি নাটকের কথা এলেই আমার বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় প্রবাদটা মনে পড়ে।’ বললাম, কেন বাঁশের তো এখন অনেক দাম, ভবন নির্মাণে ব্যাবহার হচ্ছে! উনি বললেন, ‘সবকিছু নিয়ে তুমি ঠাট্টা করো। আমি বলছি বাংলাদেশে কোনও জিনিসের দাম কমে বলে আমার জানা নেই শুধু টিভি নাটক ছাড়া। তবে নাটকের মূল্যহ্রাস হলেও কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর মূল্যস্ফীতিকে আমি বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়র সঙ্গে তুলনা করছি।’
বললাম, তা আপনি করতেই পারেন তবে শিল্পীদের মূল্যস্ফীতি আনন্দের বিষয় বলে আমি মনে করি, যদি তার সঙ্গে সঙ্গে নাটকেরও মূল্য বৃদ্ধি হয়। নচেৎ তা নাটকের শরীরে বিষফোঁড়াবৎ মনে হবে, যা ফেটে বার না হওয়া পর্যন্ত যন্ত্রণার সীমা থাকবে না। আমাদের কপিরাইট ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে একের গল্প অন্যে চুরি করিলেও কিছু করার থাকে না, চুক্তিপত্র হয় না বলে একের পয়সা অন্যে মারিয়া দিলেও আঙ্গুল চুষিতে হয়। এখানে মিডিয়ার চোখে পড়ার নিমিত্তে কপালে এক বিশেষ ধরনের নজর টিপ পরিয়া ঘুরিতে হয়, যাতে তারা অকর্মা একজনকে পাম্প করে ফুলাতে ফুলাতে প্রায় ফাটিয়ে ফেলতে পারে। এখানে জীবননির্ভর সিরিয়াস নাটক বানালে সেল্স থেকে সিরিয়াস ফিডব্যাক আসে, ‘নাটকটি যথেষ্ট মানসম্পন্ন না হওয়ায় বিক্রি হইলো না।’ অথচ একজন উন্মাদ টাইপের চরিত্র চা খাওয়ার পর তার পশ্চাদ্দেশ থেকে গরম ধোঁয়া বার হয়, এরকম কমেডির এখানে কদর বেশি।
যাই হোক, মাঝখানে যেটা বলেছিলাম- ‘আমাদের গোলপোস্টটাই সরে গেছে।’ সবমিলিয়ে আমরা আমাদের টিভি নাটককে চ্যাঙদোলা করে আজিমপুর নিয়ে যাচ্ছি। এর জন্যে দায়ী আমরা সবাই। সব কুশীলব। সময় এসেছে, কুশীলবগণ, আসেন ঘুরে দাঁড়াই। সবাই একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়ালে আজিমপুর থেকে নাটকও ফিরবে বাঙালির ঘরে ঘরে।
এ আহ্বান আজ ছড়িয়ে পড়ুক দেশের অন্যতম অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের মাধ্যমে। আজ তাদের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পরবাসে থেকে জানাই শুভেচ্ছা অগনন- এই প্রতিষ্ঠানের সবার প্রতি।
/এমএম/