‘আমাকে দুই মিনিট সময় দেবেন? একটু চোখটা বন্ধ করে বসে থাকব।’
এভাবেই সাংবাদিকদের বিনীত অনুরোধ করে চোখটা বন্ধ করলেন মাহিয়া মাহি। আলতো করে দুহাতে চোখটা ঢেকে ফেললেন। হালকা ধূসর রঙের মার্জিত সোফায় লাল শাড়িতে মাথা নিচু করে বসে আছেন মাহি; নীরব। সামনে-পেছনে ঠাসা তাজা ফুলে পরিপাটি। জানালার ওপাশে অন্ধকারে মরিচবাতির ঝলক। কী ভাবছেন মাহি? নাকি সবার সামনে আলাদা করে নিজের সঙ্গেই কথা বলছেন তিনি। শোনা যায় না। হয়তো শুনতে দেয় না বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেবের সানাই। মাহির চোখটাও দেখা যায় না। বোঝা যায় না, কতটা সামলে নিচ্ছেন নিজেকে। না, আর কিছু ভাবতে দিলেন না। স্তব্ধবাক চোখ দুটো মেলেই দুষ্টুমির হাসি। বললেন, যাক এবার আবার ছবি তুলতে পারেন। চোখ দুটোকে একটু বিশ্রাম দিলাম।
মাহি শুরুটা করলেন অনুভূতি জানানো দিয়েই।
প্রশ্ন করার আগেই নিজে থেকে বললেন, এখানে এতো শব্দ, অনেক ক্যামেরা, কথা হচ্ছে চারদিকে, লাইভও হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি কোনও সিনেমার মহরতে এসেছি। এখানে পরিচিত সব সাংবাদিকরা। তাই আলাদা তেমন অনুভূতি হচ্ছে না!
বাংলা ট্রিবিউন: বর অপুর কাছে জানতে চাই, মাহির প্রেমে পড়লেন কীভাবে? বা তার কোন বিষয়টি ভালো লাগে?
পারভেজ মাহমুদ অপু: আসলে আমি তো ওভাবে প্রেমে পড়িনি। তার সবকিছুই ভালো লাগে। সে বাস্তবে যেমন সিনেমার পর্দাতেও তাই। এটা আমার খুব ভালো লাগে।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু বিয়ের সিদ্ধান্ত একটু দ্রুত হয় গেল না?
মাহিয়া মাহি: বরাবারই ইচ্ছে হতো, যখন মানুষ আমাকে ভালোভাবে মনে রাখবে ঠিক তখই বিয়ে করব। আমার ক্যারিয়ার নিম্নগামী হয়ে যাবে, কাজ কমে যাবে- এমন সময়ে বিয়ে করতে চাইনি। আমি এই বর্তমান অবস্থা থেকেই বিয়ে করতে চেয়েছি। এবং সেটাই করেছি।
বাংলা ট্রিবিউন: অভিনয়ে কি আগের মতোই পাওয়া যাবে এখনও?
মাহি: অবশ্যই আমি অভিনয় করব। বছরে হয়তো একটা বা দুটো ছবিতে থাকব।
মাহি: আমার যদি মনে হয়, আমাকে কেউ পছন্দ করছেন না, আমি থাকব না। যদি মনে হয় আসলে দর্শক আমাকে চাচ্ছেন, তবেই কাজ চালিয়ে যাব। তবে আমি একজন ভক্তের জন্যে হলেও কাজ করতে চাই। যদি দর্শক একেবারেই আমাকে আর গ্রহণ না করেন তবে সিলেটে গিয়ে ভাত রান্না করব।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি ঢালিউডের অন্যতম নায়িকা। এ মুহূর্তে ছবি কমিয়ে দিলে চলচ্চিত্রের জন্য ক্ষতি হবে না?
মাহি: আমি এখনও ভাবিনি ওভাবে। কারণ আমি এখন তো বছরে তিনটা করে ছবি করি। আগামীতে দুটো করে করব। খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে করি না।
আর আমি তো সরে যাচ্ছি না। মাত্র একটা ছবি কম করবো। এতে আমার জায়াগা আরও পোক্ত হবে। আমি মনে করি, এটা আমার সঠিক সিদ্ধান্ত।
মাহি: আমার শ্বশুর-শাশুড়ি খুব স্মার্ট। তাছাড়া সবাইকে ম্যানেজ করার অল্প বিস্তর ক্ষমতা আমার আছে। সেটা কাজে লাগাব!
বাংলা ট্রিবিউন: তারপরও অন্য কোনও পরিকল্পনা?
মাহি: আমি আসলে ভাগ্যে খুবই বিশ্বাসী। প্রথম যখন শুরু (‘ভালোবাসার রং’) করলাম- তখন আমি কে ছিলাম? কিছু না। আমার ভাগ্যই আমাকে এতদূর পথ দেখিয়েছে। তাই বিয়ের পরের বিষয়টি ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে চাই। দেখি ভাগ্য আমাকে কোন দিকে নিয়ে যায়। তবে মনে হয়, ভাগ্য আমাকে নিরাশ করবে না।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু ভক্তরা তো ভাবতেই পারেন বিয়ের মাধ্যমে সিলেটের অপু ঢাকার মাহিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন।
অপু: না না, আমি মোটেই তাকে ছিনিয়ে নেইনি (হেসে দ্রুত জবাব)। সে তার জায়গায় আছে। এখনও আপনাদের সামনে! শুধু আমি তার জীবনে যুক্ত হয়েছি। আশা করি, ভক্তরা এভাবেই নেবেন।
বাংলা ট্রিবিউন: পর্দায় মাহিকে অন্যের সঙ্গে প্রেম করতে দেখেছেন। পর্দায় কি তার সঙ্গে অভিনয়ের ইচ্ছে আছে?
অপু: সিনেমার পর্দায়? জ্বি না, জ্বি না।
বাংলা ট্রিবিউন: ভক্তদের তোপ বা ভালোবাসা কেমন পাচ্ছেন?
মাহি: বিয়ের খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আমার ইনবক্স ভরে গেছে। শুধু তাদের কথা ‘যা রে, যাবি যদি যা…’!
বাংলা ট্রিবিউন: মধুচন্দ্রিমা কোথায় করছেন?
মাহি: দেশের বাইরে গেলে আমার ভালোই লাগে না। তাছাড়া সিলেট আমার প্রিয় জায়গা। মধুচন্দ্রিমা সম্ভবত দেশেই করবো। এখনও ঠিক করিনি।
অপু: ওহো.. সিলেটে করবে (উচ্ছ্বাস)!
বাংলা ট্রিবিউন: মাহিকে সিনেমার বাইরেও নানা জায়গায় ঘুরতে দেখা গেছে। অনেকটা ভ্রমণপ্রিয় মানুষ হিসেবে আপনাকে অনেকেই জানেন। এটার ভবিষ্যৎ কী!
মাহি: আসলে আমি একটু দুষ্টুমি করি। ঘুরে বেড়াই। ও (অপু) তার বিপরীত। একেবারে শান্ত। তবে সবকিছু চলবে। সে যদি আমার মতো বাচ্চা চরিত্র হয়ে যেতে পারে তাহলে ভালো হয়।
অপু: সমস্যা নেই। বিয়ের পর ওর সঙ্গেই ঘুরে বেড়াব হয়তো।
মাহিয়া মাহি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।
এবার মাহির কাছে ঝটপট কয়েকটি প্রশ্ন:
ট্রিবিউন: বিয়ের দেনমোহর কত ছিল?
মাহি: এটা শ্বশুর-শাশুড়ি বলতে পারবেন।
ট্রিবিউন: অংলকার?
মাহি: মাপার সময় পাইনি।
ট্রিবিউন: শাড়ি কোথা থেকে আনা?
মাহি: এটা শাশুড়ি আম্মা বলতে পারবেন।
ট্রিবিউন: বিয়ের সিদ্ধান্ত কবে হয়েছিল?
মাহি: এক সপ্তাহ আগে।
ট্রিবিউন: বিয়ের কেনাকাটা কত দিন ধরে করেছেন?
মাহি: যেদিন চূড়ান্ত হলো, অর্থাৎ সাতদিন।
ট্রিবিউন: মানুষ হিসেবে অপু আসলে কেমন?
মাহি: অপু খুবই ভদ্র। একটু বোকা-সোকা টাইপ। তার এ গুণটা আমার পছন্দ।
অপু-মাহি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।
ট্রিবিউন: সম্পর্ক কি চার বছরের?
মাহি: না, তিন বছরের। এ সময় পরিচয় ছিল আমাদের। প্রেম নয়। দেখেছি যে এমন একটি সহজ-সরল ভালো মানুষ আশে-পাশেই আছেন। তাই বিয়ে করে ফেলামাম।
এছাড়া পরিবার অনেকদিন ধরেই বলছিল। কারণ চারপাশ থেকে অনেক খবর আসছিল। আম্মা বললেন, পড়াশোনা করো আর বিয়ে করো। আমি বললাম, বিয়ে, পড়াশোনা ও অভিনয়- তিনটাই করি। দেখি আমি কতটা প্রতিভাবান!
ট্রিবিউন: মঙ্গল সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা। টানা ২৪ ঘণ্টাকে কীভাবে বর্ণনা করবেন?
মাহি: মঙ্গলবার রাতে আমার গায়েহলুদ হয়েছে। এরপর থেকে তো টানা আপনাদের (সাংবাদিক) ফোন রিসিভ করতে করতে সময় পার হয়ে গেছে। বুধবার সকালে আকদ হয়েছে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফোনেও ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় দেখা করতে এলাম আপনাদের সঙ্গে।
ট্রিবিউন: শুধু সাংবাদিকদের জন্য এ আয়োজন করেছেন। কিন্তু আপনার সহকর্মীরা তো জানতে পারলেন না।
মাহি: না, এবার সাংবাদিকদের জন্য। আর পরে জুলাইয়ের শেষে সিলেটে বিবাহোত্তর সংবর্ধণা থাকবে। সেখানে আমার সব সহকর্মীরা আসবেন বলে আশা করি।
মাহিয়া মাহি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।
এবার অপুর কাছে কয়েকটি ঝটপট প্রশ্ন:
ট্রিবিউন: মাহির কোনও ছবি দেখেছেন?
অপু: বেশ কয়েকটি।
ট্রিবিউন: কোনও একটির নাম মনে আসছে?
অপু: আমি সর্বশেষ ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দেখেছি।
ট্রিবিউন: অভিনয় দেখে কেমন মনে হলো তাকে?
অপু: তার অভিনয় দেখে মনে হয়নি সে আলাদা। সে বাস্তবেও এরকমই।
ট্রিবিউন: তার কোনও গান গেয়েছেন?
অপু: হ্যাঁ।
ট্রিবিউন: এখন দু’এক বাক্য গাইবেন কি?
অপু: না, মনে পড়ছে না। (কয়েকবার মনে করার চেষ্টা করেছেন)
ট্রিবিউন: সর্বশেষ কথা কী বলবেন?
অপু: আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা ভবিষ্যতে যেন ভালো থাকতে পারি। আমি জানি, তার সব ভক্ত আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
/এম/এমএম/