১৯৩৫ সালের এই দিনে তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমার অর্ন্তগত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৫৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও পরের বছর বাংলায় ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন সেখান থেকে।
১৯৫০ সালে ‘যুগের আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন জহির রায়হান। পরবর্তীতে প্রবাহ, এক্সপ্রেস, খাপছাড়া, যাত্রিক, সিনেমা, সমকাল, চিত্রালী, সচিত্র সন্ধানীসহ বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৬১ সালে ‘কখনো আসেনি’র মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন জহির রায়হান। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন তিনি। পরের বছরই মুক্তি দেন প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’। তার নির্মিত অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘বেহুলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ প্রভৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে স্মরণ করা হয় ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটিকে। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অসাধারণভাবে সিনেমাটিতে ফুটে উঠেছে। যা এখনও অনবদ্য নির্মাণ হিসেবে বিবেচিত সর্বমহলে।
জহির রায়হান সিনেমা নির্মাণ ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলকাতায় চলে যান। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় ‘জীবন থেকে নেয়া’র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী করেন তখন। চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা, ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন তখন। চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও প্রদর্শনী হতে পাওয়া টাকা মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন জহির রায়হান।
১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন জহির রায়হান। নিখোঁজ বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে যান। এরপর আর তিনি ফিরে আসেননি। কোনও খোঁজও পাওয়া যায়নি এখনও।
এদিকে জহির রায়হানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী (ঢাকা মহানগর সংসদ) আয়োজন করেছে ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’।
‘প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্যামেরা’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ (১৯ আগস্ট) দিনব্যাপী এই উৎসব চলছে। রাজধানী শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।
সকাল ১০টায় উৎসব উদ্বোধন করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসিন মুরাদ। অতিথি ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী, সহসভাপতি শংকর সাওজাল, জহির রায়হানের ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার, ছেলে অনল রায়হান ও ভারতীয় নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের নানা পর্যায় ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেছেন অতিথিরা। যাতে উঠে এসেছে জহির রায়হানের জীবন, কর্ম ও আদর্শের নানা দিক।
‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’-এ থাকছে তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড, সৌমিত্র দস্তিদারের প্রামাণ্যচিত্র ‘এ লেটার টু মাই ডটার’, তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’, সেন্টু রায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘জহির রায়হান’, কামার আহমাদ সাইমনের ‘শুনতে কি পাও’ এবং উদীচী কেন্দ্রীয় চারুকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের তৈরি করা প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’।
/এমএম/