ঠিকরে পড়ছিল তার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য

মনিকা বেলুচ্চি ও পেদ্রো আলমোদোভারধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন এক রূপবতী। চুলগুলো ঢেউ খেলে নেমে এসেছে কাঁধে। স্বচ্ছ হালকা কালো গাউন ছুঁয়ে আছে মেঝে। চলার পথ মসৃণ করতে দু'হাতে সেই গাউন ধরে এগোচ্ছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ মনিকা বেলুচ্চি। কানের উদ্বোধনী মঞ্চের সামনে থেকে উপস্থিত সবার চোখ বুঝি আটকে গেলো তার পানে।

মঞ্চে মনিকা বেলুচ্চিদক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্রতীরবর্তী এই অঞ্চলে গেল দু’বার পা রাখেননি তিনি। এবার আগে থেকেই জানা ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন ৫২ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী। বুধবার (১৭ মে) দুপুরেই মনিকা বেলুচ্চির সঙ্গে হয়ে গেলো প্রথম দেখা! তখন তিনি এসেছিলেন ফটোকলে। এ সময় ঠিকরে পড়ছিল তার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য। খোলা চুল, গায়ের ফরসা রং। বাদামি চোখ জোড়ায় যেন হাজারও কবিতা! মনে পড়ে গেলো ‘ম্যালেনা’র কথা। ওই ছবিতে তার মোহে বুঁদ হয়ে পড়েছিল এক বালক।
মঞ্চে মনিকা বেলুচ্চির আলোচিত চুমুবয়সের দিক দিয়ে হাফ সেঞ্চুরি করলেও মনিকা বেলুচ্চির লাবণ্য কমেনি কিঞ্চিৎ। সাধে কি আর  সবচেয়ে বেশি বয়সী বন্ডকন্যা হতে পেরেছেন তিনি! ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের ‘স্পেক্টর’ ছবিতে ড্যানিয়েল ক্রেগকে অবলীলায় কাবু করে ফেলেছিলেন ইতালীয় এই রূপসী।
বুধবার (১৭ মে) দুপুরের পর সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১১টা) ৭০তম কান উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মনিকাকে দেখে আরও ঝলমলে লাগলো। তার পরা গাউনটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ডিওরের। ফরাসি কমেডিয়ান অ্যালেক্স লুৎজকে চুমু দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের হতবাক করে দেন তিনি।
বিশ্ব চলচ্চিত্র তারকাদের সঙ্গে মনিকা বেলুচ্চিইতালীয় হলেও মনিকা থাকেন ফ্রান্সে। তাকে দেখলে মনে হতে পারে শরীরচর্চায় প্রচুর ঘাম ঝরান। আসলে এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। ডেইলি টেলিগ্রাফকে তো তিনি বলেছেনই, হালকা গড়ন ধরে রাখতে ভোর ৬টায় উঠে জিমে যাওয়ার পক্ষপাতী তিনি নন। বরং জীবনকে উপভোগ করে পাস্তা ও কেক খেয়েই সৌন্দর্য ধরে রেখেছেন বলে জানালেন। তার পরামর্শ হলো, ‘ভালো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পান করুন। নিয়মিত হাসুন। বাকিটা আপনাআপনি আসবে।’
চল্লিশ পেরোলেই নারীরা যে চালশে হয়ে যান না, মনিকা বেলুচ্চিই এর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এরই অংশ হিসেবে ১৪ বছর পর আবার কানের উদ্বোধনী মঞ্চে মিস্ট্রেস অব সিরিমনিস হলেন তিনি। সবশেষ ২০০৩ সালে এ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে দেখা গেছে তাকে।
মনিকা বেলুচ্চি৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করবেন মনিকা। সুতরাং স্বাগত জানানোর ১২ দিন পর বিদায়ও বলবেন তিনিই।
কান উৎসবের সঙ্গে মনিকার সখ্য বহু বছরের। ২০০০ সালে স্টিফেন হপকিন্সের ‘আন্ডার সাসপিশান’ ছবির সুবাদে প্রথমবার কানের সিঁড়িতে পা রাখেন তিনি। এটি প্রদর্শিত হয় প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরে। এর দুই বছর পর আবার দক্ষিণ ফ্রান্সের শহরটিতে আসেন ইতালিয়ান এই রূপবতী। ২০০২ সালে তার অভিনীত গ্যাসপার নো’র ‘ইরেভারসিবল’ কানের প্রতিযোগিতা বিভাগে ব্যাপক আলোচিত ও বিতর্কিত হয়।
২০০৬ সালে হংকংয়ের নির্মাতা ওঙ কার-ওয়াইয়ের নেতৃত্বে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের প্যানেলে ছিলেন মনিকা বেলুচ্চি। এর দুই বছর পর উৎসবে নির্বাচিত হয় তার অভিনীত মার্কো তুলিও গিওরদানার ‘ওয়াইল্ড ব্লাড’ এবং মেরিনা ডি ভ্যানের ‘ডোন্ট লুক ব্যাক’। ২০১৪ সালে মনিকার ‘ওয়ান্ডারস’ ছবির জন্য গ্রাঁ প্রিঁ পুরস্কার পান ইতালিয়ান নারী নির্মাতা অ্যালিস রোরওয়াচার।
সাংবাদিকদের বাই বলছেন মনিকা বেলুচ্চি/জেএইচ/এমএম/